বিদেশে অস্ত্রোপচার সেরে দেশে ফেরার তিন মাস পরে আগামিকাল উত্তরাখণ্ডে প্রথম জনসভা করবেন সনিয়া গাঁধী। তার ২৪ ঘণ্টা আগে আজ সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে যাবতীয় জল্পনা থামাতে চেয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, আপাতত তিনিই দলীয় সভানেত্রী পদে থাকবেন। দলে রাহুলের গুরুত্ব ও ভূমিকা নিরন্তর বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু তিনি সভাপতি পদের দায়িত্ব কবে নেবেন তা নিয়ে অহেতুক জল্পনা করা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কংগ্রেস সভানেত্রী। শুধু তাই নয়, অদূর ভবিষ্যতে রাহুলের কার্যকরী সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনাও আজ কার্যত খারিজ করে দিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদীর কথায়, “এই জল্পনাকে স্রেফ জল্পনাই মনে করুন।”
অগস্ট মাসের গোড়ায় অস্ত্রোপচারের জন্য সনিয়া বিদেশে যাওয়ার পর থেকেই, কংগ্রেস সভাপতি পদে রাহুলের অভিষেকের সম্ভাবনা ও সময় নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। এ ব্যাপারে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের মধ্যে থেকেও চাপ তৈরি হয়েছে। এমনকী কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ এ-ও চাইছিলেন যে, ১৯ নভেম্বর প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর জন্মদিনের দিন বা তার আগে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি বা সর্বভারতীয় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন ডেকে রাহুলকে সভাপতি করে দেওয়া হোক। সেটা না হলে তাঁকে অন্তত কার্যকরী সভাপতি করার জন্যও চাপ ছিল দলের একাংশের। দশ জনপথের ঘনিষ্ঠ মহলও এই পরামর্শ দিচ্ছিল। |
কিন্তু আজ এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য তথা মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, “কংগ্রেসের মধ্যে রাহুল গাঁধীর ভূমিকা ও গুরুত্ব যে বেড়েছে, তা কোনও গোপন কথা নয়। স্বাভাবিক নিয়মেই এটা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা-কর্মীরাও তাই চান। কিন্তু সনিয়া গাঁধীই এখন দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং দেবেন।”
প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর আনুষ্ঠানিক ভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশের সম্ভাবনা নিয়েও আজ প্রশ্ন ওঠে। জবাবে জনার্দন বলেন, “এটা নিছকই গাঁধী পরিবারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে ওঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, কৌশলগত ভাবেই আজ রাহুলকে কেন্দ্র করে জল্পনা খারিজ করে দিতে চেয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। পরিবর্তে এই বার্তা দিতে চাওয়া হয়েছে যে, সনিয়া এখন সুস্থ এবং সক্রিয়। তিনিই দলকে নেতৃত্ব দেবেন। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরাখণ্ডে নির্বাচন হওয়ার কথা। সে দিকে তাকিয়ে আগামিকাল থেকেই কার্যত নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিতে চলেছেন সনিয়া। এর পর তিনি উত্তরপ্রদেশ এবং পঞ্জাবে ভোট প্রচারে যাবেন। এই দুই রাজ্যেও নির্বাচন আসন্ন।
কিন্তু রাহুল দলের হাল ধরবেন কবে?
এআইসিসি-র এক কেন্দ্রীয় নেতা আজ বলেন, এই মুহূর্তে রাহুল দলের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্কিং কমিটি ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য। কিন্তু তাঁর মর্যাদা ও গুরুত্ব যে তার থেকে অনেক বেশি, তা কংগ্রেসের সবাই জানেন। তা ছাড়া, সরকারের বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াতেও রাহুল এখন অংশ নিচ্ছেন। তাঁর পরামর্শেই লোকপালকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছে সরকার। একই ভাবে জমি অধিগ্রহণ বিল ও খাদ্য সুরক্ষা বিলের খসড়া চূড়ান্ত করতে গিয়েও রাহুলের মতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
তবে তিনি কবে দলের সভাপতি পদের দায়িত্ব নেবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বিবেচনা করা দরকার বলে ওই নেতার মত। প্রথমত, দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে দল রাহুলের উপর সার্বিক দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় তাঁকে সভাপতি করাটা অসুবিধাজনক। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ফল আশানুরূপ না হলে রাহুলের দিকেই আঙুল উঠবে। বিরোধীরা এ কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাবে যে, রাহুল সভাপতি হওয়ার পর কংগ্রেসের বিপর্যয় হল। অন্য দিকে, কংগ্রেস ভাল ফল করলে এমনিতেই রাহুলের রাজনৈতিক উত্তরণের দাবি জোরালো হবে। অনুকূল পরিস্থিতিতে তখন সেই দাবি মেনে নিতে পারেন সনিয়া। |