সকাল থেকে কাতারে কাতারে ভক্তের ভিড়। একটি সেতু পেরিয়ে আশ্রমে ঢুকছিলেন সকলে। সেখানেই ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলেন ১৬ জন।
মঙ্গলবার সকালে হরিদ্বারের একটি আশ্রমে এই ঘটনা ঘটে। মৃতদের মধ্যে ১৪ জন মহিলা ও দু’জন পুরুষ। আহত অন্তত ৩২ জন। আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন আশ্রম কর্তৃপক্ষকে অনুষ্ঠান বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে। আয়োজকরা আগামি কাল প্রার্থনার পরে অনুষ্ঠান শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ, অণ্ণা হজারে এবং দলাই লামার এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার কথা ছিল।
রবিবার থেকেই হর কি পৌড়ির কাছে গায়ত্রী সংঘের শান্তিকুঞ্জ আশ্রমে গুরু পণ্ডিত শ্রীরাম শর্মার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। আজ আশ্রমে যজ্ঞ হওয়ার কথা ছিল। তাতে যোগ দিতে ভক্তরা সকাল থেকেই আশ্রমে ভিড় করেছিলেন। এমনকী, ঘটনার সময় হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম কুমার ধুমলও আশ্রমেই ছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় দু’লাখ লোক হরিদ্বারে এসেছেন। কিন্তু সেই ভিড় সামলানোর মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ। |
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, যজ্ঞে পুজো দিতে সকলেই হুড়োহুড়ি করছিলেন। সিঁড়ি বেয়ে নেমে একটি সেতু পেরিয়ে ওই যজ্ঞের জায়গায় যেতে হয়। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ঘটে বিপত্তি। ভিড়ের চাপে আর ধাক্কাধাক্কিতে কয়েক জন মহিলা ও শিশু মাটিতে পড়ে যান। শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি। ভয়ে অনেকে দৌড়োদৌড়ি শুরু করেন। মাটিতে যাঁরা পড়েছিলেন, তাঁদের মাড়িয়েই লোকজন ভিতরে ঢুকতে থাকেন।
পদপিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান বেশ কয়েক জন। তবে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অন্য একটি সূত্রের দাবি, ভক্তদের ভিড় সামলাতে আশ্রমের স্বেচ্ছাসেবকরা লাঠি চালাতে শুরু করেছিলেন। তাই ভক্তদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে মাটিতে পড়ে যান। ঘটনার পরে অনুষ্ঠান আয়োজকরাই আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। ১০ জনের অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
পুলিশের একাংশের অভিযোগ, শান্তিকুঞ্জ আশ্রমে প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানে প্রচণ্ড ভিড় হয়। এ বছর নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা আশ্রম কর্তৃপক্ষই দেখাশোনা করছিলেন। পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলে এই ঘটনা এড়ানো যেত। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেন্থিল পান্ডিয়ান জানান, মৃতদের অধিকাংশই উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি, মুঙ্গের ও সুলতানপুরের বাসিন্দা। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। গত ১৯ মাসে এই নিয়ে হরিদ্বারে দ্বিতীয় বার পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল মহাকুম্ভ মেলায় পদপিষ্ট হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ বছরে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে পদপিষ্ট হয়ে প্রায় ১ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বি এস খাণ্ডুরি আশ্রমে যান। মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে আশ্রমও। প্রধানমন্ত্রী মৃতদের পরিবারকে এক লক্ষ ও আহতদের ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন। শোক প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। ঘটনাস্থলে যান বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। |