পুরসভার একটি ডাম্পারের ধাক্কায় এক পথচারীর জখম হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল কড়েয়া এলাকার নাসিরুদ্দিন রোডে। ডাম্পারটিতে আগুনও লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। মঙ্গলবার দুপুরের ওই ঘটনায় ঘণ্টাখানেক পার্ক সার্কাস মোড়ের আশপাশে প্রায় সবক’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কার্যত থমকে যায় যানচলাচল। নাকাল হন সাধারণ মানুষ।
দুর্ঘটনার জন্য এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগের আঙুল তুলছেন নাসিরুদ্দিন রোড এবং ঝাউতলা রোডের সংযোগস্থলে রাস্তার মাঝখানে থাকা সিইএসসি-র একটি বৈদ্যুতিক ফিডার বক্সের দিকে। সেটির জন্য ওই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে বলে ট্রাফিক পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে। পুলিশের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে রাস্তার নিয়ম মানেন না পুরসভার গাড়ির চালকেরাও।
সিইএসসি-র তরফে জানানো হয়েছে, ওই ফিডার বক্সটি সরিয়ে নিতে পুলিশ তাদের অনুরোধ জানিয়েছে। সেটি সরাতে হলে রাস্তাটি খুঁড়তে হবে। এর জন্য পুরসভার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তা মিললেই ফিডার বক্সটিকে সরিয়ে দেওয়া হবে। |
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “জঞ্জাল সাফাইয়ের ডাম্পারগুলি প্রতিদিন শহরের এ দিক-ও দিকে প্রায় এক হাজার বার যাতায়াত করে। দুর্ঘটনা তো তেমন ঘটে না। এ ধরনের অভিযোগও এর আগে পাইনি। যান-শাসনের দায়িত্ব পুলিশের। আইন ভাঙলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে।”
কী ভাবে ঘটল এ দিনের দুর্ঘটনা?
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ ঝাউতলা রোড দিয়ে সাইকেলে নাসিরুদ্দিন রোডের দিকে যাচ্ছিল বছর পনেরোর মিরাজুদ্দিন। দু’টি রাস্তার সংযোগস্থলের সামনে এসে এক পাশে দাঁড়িয়ে যায় সে। তখনই সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের দিক থেকে দ্রুত গতিতে সার্কাস অ্যাভিনিউয়ের দিকে যাচ্ছিল পুরসভার একটি ডাম্পার। ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন মহম্মদ সাকিল জামান। তিনি বলেন, “ফিডার বক্সটির কাছ দিয়ে ঝাউতলা রোডে ঢুকতে গিয়েও ডাম্পারটি ফের সার্কাস অ্যাভিনিউ-এর দিকে ঘুরে যায়। ওই মোড়েই সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়েছিল এক কিশোর। ডাম্পারটি গিয়ে তাকে জোরে ধাক্কা মারলে ছিটকে যায় ওই কিশোর। মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে তার।” আহতকে ন্যাশনাল মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরের মাথায় চোট লেগেছে।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরে প্রথমে গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে চালক। কিন্তু সার্কাস অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে গিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে যায়। স্থানীয়েরা তাড়া করেছেন দেখে সেখানে গাড়ি ফেলেই পালায় চালক ও খালাসি। এর পরেই ডাম্পারে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন আগুন নেভায়। দুর্ঘটনার জেরে এজেসি বসু রোড উড়ালপুল, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, সার্কাস অ্যাভিনিউ-সহ পার্কসার্কাস সাত মাথার মোড়ের আশপাশের রাস্তায় যানচলাচল কিছুক্ষণের জন্য বিপর্যস্ত হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসিরুদ্দিন রোডের মাঝখানের বৈদ্যুতিক ফিডার বক্সটির জন্য সেখানে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। কিন্তু সেটিকে সরানোর কোনও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। পুলিশ জানায়, এ দিনের দুর্ঘটনার পরে ঝাউতলা রোড এবং নাসিরুদ্দিন রোডের সংযোগস্থলে লোহার গার্ড রেলিং দিয়ে দেওয়া হয়েছে। |