জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে পুলিশ যে কতটা গা-আলগা, সোমবার রাতে আরও এক বার তার প্রমাণ মিলল। ওই দিন সন্ধ্যার পরে পিকনিক গার্ডেন রোডে নেশার বোতল হাতে নিয়ে উদ্দাম নৃত্য করতে করতে চলে জগদ্ধাত্রীর বিসর্জনের মিছিল। পুলিশের টিকিও দেখা যায়নি আশপাশে।
পুলিশই ঠিক করে দিয়েছিল, রবিবার, ৬ নভেম্বর জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের শেষ দিন। কিন্তু পিকনিক গার্ডেনে সোমবার বিসর্জন হলেও লালবাজারে বসে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম দাবি করেছেন, “সোমবার কোনও জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে বলে আমার জানা নেই।” রবিবার রাতেও জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসান ঘিরে তুমুল গোলমাল বাধে, দক্ষিণে ভবানীপুর ও উত্তরে বিডন স্ট্রিট লাগোয়া এলাকায়। ভবানীপুরের ঘটনায় পরিস্থিতি সামলাতে শেষমেশ পথে নামতে হয় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিডন স্ট্রিটে এ দিনও বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন ছিল এলাকায়। তবে, দু’টি ঘটনা থেকে পুলিশ যে কোনও শিক্ষাই নেয়নি, সোমবার রাতের ঘটনাই তার প্রমাণ। |
কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না-করে রাস্তা জুড়ে ‘বেলেল্লাপনা’ করতে করতে শুধু পিকনিক গার্ডেনের প্রতিমাই বিসর্জনে গেল না, আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর ধরে কালিকাপুরের দিকেও একই ভাবে নিয়ম ভেঙে শোভাযাত্রা সহকারে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দু’টি ক্ষেত্রেই পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ।
পিকনিক গার্ডেন রোডের ওই শোভাযাত্রার চেহারা ঠিক কেমন ছিল? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সওয়া দশটা নাগাদ স্থানীয় একটি ক্লাবের শ’দেড়েক ছেলে উদ্দাম নাচতে নাচতে ওই শোভাযাত্রা বার করে। এগোতে থাকে বাইপাসের দিকে। ১৮-২৫ বছরের ওই তরুণদের অনেকের হাতেই ধরা ছিল বোতল। কেউ কেউ আবার নাচ থামিয়ে মাঝেমাঝেই প্যান্টের পকেট থেকে বোতল বার করেছে। প্রকাশ্যে গলায় ঢেলেছে মদ। শুধু তা-ই নয়, ক্রিকেট ম্যাচ জিতে খেলোয়াড়েরা যে ভাবে শ্যাম্পেনের বোতল খুলে ঝাঁকাতে থাকেন, প্রায় একই কায়দায় ওই ক্লাবের ছেলেরাও রাস্তায় ইচ্ছেমতো মদ ছিটিয়ে নাচছিল বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। সেই মদ পথচারীদেরও গায়ে লাগে বলে জানান তাঁরা।
এলাকার এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, রাতের ওই সময়ে রাস্তায় খুব বেশি লোক না-থাকলেও, অনেকে অটোয় চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই তরুণদের অনুরোধ করা হয়, যানবাহনের রাস্তা ছেড়ে শোভাযাত্রা নিয়ে যেতে। কিন্তু সেই অনুরোধ কানে তোলা দূরে থাক, উল্টে যাত্রীদের হুমকি দেওয়া হয়, তাঁরা ‘বাড়াবাড়ি’ করলে সারা রাত রাস্তা আটকে রাখা হবে। স্থানীয় অনেকে এই অভিযোগও করেছেন যে, শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া বহু ছেলেই নেশা করে বেসামাল হয়ে উন্মত্তের মতো আচরণ করছিল। তাদের আচরণে ভয় পেয়ে যান মহিলা এবং ছোট ছেলেমেয়েরা। বাড়ি ফিরতে আকুল মহিলারা অনেকে ভয়ে কেঁদেও ফেলেন। |
কেন শেষ তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ওই ভাবে শোভাযাত্রা করে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জনের অনুমতি দিল পুলিশ? যুগ্ম কমিশনার (সদর) বিষয়টি জানা ছিল না বলে এড়িয়ে গেলেও লালবাজারের কয়েক জন পুলিশকর্তা জানান, অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ধর্মীয় শোভাযাত্রায় আইনের কড়াকড়ি হয় না। পিকনিক গার্ডেনের ক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কাতেই আইন মানতে বাধ্য করা যায়নি ক্লাবগুলিকে।
|