‘ছেড়ে দাও’, বাসে উঠে দ্রুত অবতরণ বিমানের
ভিড়ের মধ্যে পথ করে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে হাঁটছেন খর্বকায় এক ধুতি-পাঞ্জাবি। কার্যত দৌড়চ্ছেন। পিছনে পিছনে ক্যামেরা আর ‘বুম’ হাতে এক ঝাঁক বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম। বড় রাস্তায় উঠে অনুসরণকারীদের হাত থেকে নিস্তার পেতে নিজের গাড়ি খুঁজছেন তিনি। কিন্তু ওই ভিড় আর তাড়ায় কোথায় গাড়ি? সত্তরোর্ধ্ব মানুষটি এ বার উঠে গেলেন একটি বাসে। আইন অমান্যের জন্য যে বাসে পুলিশের স্টিকার লাগানো ছিল। তিনি উঠলেন তো, পিছনে ক্যামেরার ঝাঁক! বাসের আরোহী চেঁচাচ্ছেন, “আমাকে ছেড়ে দাও! ছেড়ে দাও!”
কিন্তু নিস্তার নেই! পিছু ছাড়ার লক্ষণ নেই। ‘ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও’ শুনে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা হঠাৎ ভাবছেন, আইন অমান্যকারীদের কেউ বুঝি মুক্তি চাইছেন! এই হতচকিত মুহূর্তটিতে বাসের আরোহী কী করলেন? সামনের দরজা দিয়ে উঠে ছিলেন। আরও দ্রুত গতিতে পিছনের দরজা গলে নেমে গেলেন!
সেই মুহূর্ত। বাসে উঠছেন বিমানবাবু। নিজস্ব চিত্র
বিমান বসু আইন অমান্য করলেন? নাকি করলেন না? বাসের সামনের দরজা দিয়ে ওঠাকে ধরলে আইন অমান্যে অংশ নিলেন। পিছনের দরজা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নেমে যাওয়াকে বিবেচনায় আনলে আইন অমান্য করলেন না! রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে মঙ্গলবার দুপুরে কয়েকটি মুহূর্তের জন্যই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবুকে নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’ রয়ে গেল! তাঁর দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব এক বার ঘোষণা করলেন, তাঁদের নেতা বিমানবাবু আইন অমান্যে অংশ নিয়েছেন। টিভি-র সৌজন্যেই হবে হয়তো, সেই ঘোষণা কানে গিয়েছিল খোদ বিমানবাবুর। ‘কমিউনিস্ট-সুলভ সততা’য় বিশ্বাসী রাজ্য সম্পাদকের আপত্তি দ্রুত জায়গামতো পৌঁছে গেল। রবীনবাবুই খানিক পরে ফের ঘোষণা করলেন, বিমানবাবু আইন অমান্যে অংশ নেননি, গ্রেফতারও হননি! আসলে বাসে ওঠা দেখে কমরেডদের ‘বিভ্রান্তি’ হয়েছিল!
বিমানবাবুর নিজের অবশ্য আইন অমান্য নিয়ে কোনও ‘বিভ্রান্তি’ ছিল না। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ কর্মসূচি, তায় এ রাজ্যে দীর্ঘ ৩৮ বছর পরে সিপিএমের তরফে কোনও আইন অমান্য হচ্ছে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান হিসাবে অন্য শরিক নেতাদের মতোই তিনি গিয়েছিলেন, আন্দোলনের প্রতি ‘সহমর্মিতা’ জানাতে। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে জমায়েতস্থলে গিয়ে বসে ছিলেন। সংগঠিত ভাবে লোক না-এনেও শ্রমিক সংগঠনগুলি কেমন সাড়া পেয়েছে, তা শুনছিলেন, দেখছিলেন। কিন্তু তিনি ‘জেল ভরো’য় যাবেন কি না, কেনই বা যাচ্ছেন না আইন অমান্য করতে একের পর এক প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে তাঁকে উঠে পড়তে হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমের তাড়নার জন্য প্রায়শই ক্ষোভ করতে দেখা যায় বিমানবাবুকে, এ দিনও তার ব্যত্যয় হয়নি। ওই করতে করতেই বাসে ওঠা-নামা। এবং ‘বিভ্রান্তি’!
তবে যে ‘বাইট’ এড়ানোর জন্য এত কাণ্ড, তার থেকে রেহাই মেলেনি বিমানবাবুর! বাসের পিছনের দরজা থেকে নামা মাত্রই সামনে ‘বুম’! তিতিবিরক্ত এবং ঈষৎ কিংকর্তব্যমিমূঢ় বিমানবাবু ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলন, ভবানীপুরের ঘটনা সব মিলিয়ে অদ্ভুত ‘মিশ্র প্রতিক্রিয়া’ দিলেন! বললেন, “বামফ্রন্টের পক্ষ থেকেও আইন অমান্য হবে। তাতেও বহু মানুষ জড়ো হবেন।” সম্ভবত বোঝাতে চাইলেন, বামফ্রন্টের সেই ‘জেল ভরো’য় চেয়ারম্যান হিসাবে তাঁর থাকার কথা। এ বারেরটায় নয়। আরও বললেন, “আমরা বারবার বলছি, রেশন ব্যবস্থা দেশ জুড়ে চালু করতে। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।” এর সঙ্গেই ভবানীপুরের ঘটনা নিয়ে কয়েকটি কথা। যার মূল কথা ‘দলতন্ত্র’। এবং যার শেষে ‘জনগণের’ বলে একটি বাক্য শুরু করেও শেষ করলেন না!
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে দ্রুত প্রস্থান ঘটল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্ণধারের!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.