ভবানীপুরে জগদ্ধাত্রী-পুজোর ভাসানের সময়ে থানায় ‘হামলা’ ও পুলিশকে ‘মারধর’-এর ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দু’টি পুজোর কর্মকর্তারা চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের সামনে উচ্চ শব্দের বাজি ফাটিয়ে উল্লাসে মাতলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। পুলিশের অভিযোগ, এর পরেই তাদের উপর চড়াও হয় এক দল মানুষ। হামলা চালানো হয় থানায়। পরে হামলাকারী অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে আটক করে। এই ঘটনায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থানায় আসেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এর পরেই তাঁরা দেখেন আটক ওই যুবকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। |
রবিবার রাতের ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরব হয়েছে। সিপিএম এবং বিজেপি একই সুরে আক্রমণ শানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। দু’পক্ষের অভিযোগ, দলীয় কর্মীদের ছাড়াতেই থানায় গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “গণতন্ত্রের বদলে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ভবানীপুরের ঘটনায় মন্ত্রীরা গিয়েছিলেন। পুলিশ ধৃতদের ছাড়েনি। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে বললেন, ‘রিলিজ’। এ তো দলতন্ত্র! এ কি গণতন্ত্র?” রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি রাহুল সিংহের মতে, “ভবানীপুরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।” রাজ্য বিজেপি-র তরফে রাজ্যপালের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়ে বলা হয়েছে, ভাসানের সময়ে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটিয়ে ‘উল্লাস’ রুখতে পুলিশ সক্রিয় হলেও, মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কর্তাদের ‘হুমকি’ দিয়ে অভিযুক্তদের মুক্ত করেছেন।
তৃণমূলের তরফে অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী কখনওই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করার পক্ষপাতী নন। দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল সভাপতি এবং কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী থানায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বলছি, যে-ই অপরাধ করে থাকুক, দোষী প্রমাণিত হলে, সে শাস্তি পাবে।” তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সুব্রত বক্সীও এ দিন বলেন, “প্রশাসনের কাছে পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছে। প্রশাসন বিষয়টি দেখবে। আইন আইনের পথে চলবে।”
প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া ওই রিপোর্ট প্রসঙ্গে কিন্তু লালবাজারের কর্তারা কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে পুলিশের ‘অতি-সক্রিয়তা’র ফলেই কি ভাসানের রাতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল? লালবাজারের কর্তারা কি এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন? কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম, যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেনও ভবানীপুর-কাণ্ড নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে যান। ডিসি (সাউথ) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, “ওই রাতে কী ঘটেছিল তা খতিয়ে দেখার জন্য এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ঘটনার পরেই অবশ্য ‘অজ্ঞাতপরিচয় জনতা’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিল পুলিশ। ভবানীপুর থানায় দায়ের করা ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, পুলিশকর্মীদের কাজে বাধা দিয়েছে, পুলিশকে নিগ্রহ ও বাস-গাড়ি ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা। তারা থানার এক কনস্টেবলের মোবাইল ফোন ও সাইকেল ছিনিয়ে নিয়েও পালায় বলে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ভবানীপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, রানি শঙ্করী লেনের বাসিন্দা জগন্নাথ সাউ এই ঘটনায় জড়িত। ওই তল্লাটের পরিচিত ‘দুষ্কৃতী’ জগন্নাথের নামে তোলাবাজি-মারপিটের একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ভবানীপুর থানার তরফে বলা হয়েছে, চিত্তরঞ্জন ক্যানসার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সামনে ‘বোমা’ ফাটিয়ে উল্লাস চলছিল, তারস্বরে গান বাজানো হচ্ছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল রাস্তার দু’ধারই। তাই ব্যবস্থা না-নিয়ে উপায় ছিল না। |