‘শিল্পী’র মর্যাদা নেই। তবুও তিনি শিল্পী। রামকিঙ্কর বেজ, সুধীর খাস্তগীর থেকে শুরু করে দিল্লি, অসমের বিভিন্ন শিল্পীর ভাস্কর্যকে রূপান্তরের কাজ করেছেন ও করছেন মোক্তার মল্লিক।
তিনি বোলপুরের শ্রীনিকেতন-সুরুল গ্রামের বাসিন্দা। এক সময় তিনি রিকশা চালাতেন। পরে বিভিন্ন শিল্পীর ভাস্কর্যকে রূপান্তরের কাজ করেন বলে তাঁকে শিল্পী বলেই জানেন অনেকেই। বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যাপক জনক ঝংকার নার্জারীর ভাষায়, ‘‘উনি বিভিন্ন ভাস্কর্য বিভিন্ন মাধ্যমে রূপান্তরের কাজ করেন। অর্থাৎ প্রশিক্ষিত কারিগর। কিন্তু কখনওই শিল্পী নন উনি।” প্রায় একই বক্তব্য চিত্রকর যোগেন চৌধুরীরও। তবে পাশাপাশি তিনি বলেছেন, “রূপান্তরের কাজ করতে করতে কেউ কেউ শিল্পী হয়ে ওঠেন।” বক্তব্যের চাপান-উতোর যাই হোক না কেন, মোক্তার মল্লিক একজন নিখুঁত ‘রূপান্তর শিল্পী’ বলেই মনে করেন শিল্পীদের একাংশ। সম্প্রতি ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে রবীন্দ্রনাথের ১৫টি প্রতিলিপি প্রতিকৃতি তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে বিশ্বভারতীর কলাভবন।
|
কাজ করছেন মোক্তার মল্লিক। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
সেখানকার অধ্যাপক জনক ঝংকার নার্জারীর তত্ত্বাবধানে রামকিঙ্কর বেজ, সুধীর খাস্তগীর ও নিজের তৈরি ৩টি রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তির ৫টি করে মোট ১৫টি ব্রোঞ্জের প্রতিকৃতি তৈরির কাজ করছেন মোক্তার মল্লিক। মোক্তারবাবু বলেন, “জনক ঝংকারবাবু তাঁর নিজের ভাস্কর্যের ১টি মাটির মূর্তি করে দিয়েছেন। বাকি দু’জন শিল্পীর রবীন্দ্র আবক্ষ মূর্তি ব্রোঞ্জে রূপান্তরের কাজ করছি।”
শুধু ওই রবীন্দ্র আবক্ষ মূর্তির প্রতিকৃতিই নয়, ১৯৮০ সাল থেকে রামকিঙ্কর বেজের বিখ্যাত কলের বাঁশি, ধান ঝাড়াই ও সাঁওতাল পরিবারের ভাস্কর্য, কলাভবনের প্রয়াত অধ্যাপক তথা ভাস্কর্য শিল্পী প্রভাস সেন, অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক বিপিন গোস্বামী, জনক ঝংকার নার্জারী, প্রবীর বিশ্বাস প্রমুখ শিল্পীর তত্ত্বাবধানে ব্রোঞ্জের রূপান্তরের কাজ করেছেন মোক্তার মল্লিক। তিনি গত ২০০২ সালে বর্ধমানের দিনহাটা কালীবাড়ির ৮ ফুট ৮ ইঞ্চির কালী প্রতিমাও ধাতুতে রূপান্তর করেছেন। ওই মূর্তিটি অবশ্য মাটিতে তৈরি করেছিলেন একজন শিল্পী।
মোক্তার মল্লিকের কথায়, “প্রথম জীবনে রিক্সা চালাতাম। শান্তিনিকেতনের শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হতাম। হঠাৎ একদিন প্রভাসদা (সেন) ডেকে প্রথমে মাটি তৈরির কাজে লাগান। এর পর ভাস্কর্য রূপান্তরের কাজ করে চলেছি দেশের বিভিন্ন জায়গায়।” সে কথা স্বীকারও করেছেন জনক ঝংকার নার্জারী। তিনি বলেছেন, “মোক্তার মল্লিক দক্ষ ভাবে রূপান্তরের কাজ করেন। ফলে আমার পরিচিত ভাস্কর্য শিল্পীদের কাজগুলিকে তাঁকে দিয়েই রূপান্তরের কাজ করানো হচ্ছে।” |