নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
খন্দে ভরা রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। সেই রাস্তায় আবার টোল আদায় করে পুরসভা। গাড়ি চালকেরা জানিয়ে দেন, রাস্তা সারাই না হলে তাঁরা টোল দেবেন না। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে টোল আদায়কারী সংস্থাও পুরসভার কাছে নির্দিষ্ট অর্থ জমা করছিল না। এ দিকে রাস্তার মালিক আবার পুরসভা নয়, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ)। কাজেই রাস্তা সারাইয়ে তাদেরই উদ্যোগী হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে কার্যত অনাথ হয়ে পড়ে আছে রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের প্রধান প্রবেশ পথ হ্যানিম্যান সরণি। সমস্যা কবে, কী ভাবে মিটবে, জানেন না কেউ!
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হ্যানিম্যান সরণি। রাস্তাটি শুরু হয়েছে গ্যামন ব্রিজ মোড় থেকে। শেষ মায়াবাজারে। দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। |
বেহাল হ্যানিম্যান সরণি। দুর্গাপুরের আমবাগান কেবিন এলাকায় ছবিটি তুলেছেন বিকাশ মশান। |
সরকারি দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড (ডিসিএল), দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন (ডিটিপিএস)-সহ প্রায় ৩০টি বেসরকারি কারখানা গড়ে উঠেছে ওই রাস্তার আশপাশে। বস্তুত রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের প্রধান রাস্তা এটি। কারখানার ভারি গাড়ি চলাচলও লেগেই আছে। রাতুরিয়া, অঙ্গদপুর, অর্জুনপুর, পুরষা প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা নিয়মিত রাস্তাটি ব্যবহার করেন। তাঁরা জানান, সরকারি দুই কারখানার কলোনি-সহ বেশ কয়েকটি বস্তিও রয়েছে এলাকায়। কিন্তু হাল ফেরে না রাস্তার। মাঝে মধ্যে তাপ্পি দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যেই ফের তা বেহাল হয়ে পড়ে। পথচারী, বাসযাত্রী বা মোটরবাইক আরোহীদের ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা রীতিমতো বিড়ম্বনার। কারণ যানবাহন চলে যাওয়ার পরেই ধুলোর ঝড় ওঠে। মুখে চোখে রুমাল ঢেকে কোনও রকমে রাস্তা পার হতে হয় তাঁদের। লরি চালকরা জানান, অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা ভারি লরি নিয়ে যাতায়াত করেন।
কয়েক মাস আগেও পুরসভা টোল আদায় করত এই রাস্তায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে পুরসভা উদ্যোগী নয়। শেষ পর্যন্ত টালবাহানার মাঝে পড়ে টোল আদায় বন্ধ করে দেয় পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তাটি এডিডিএ-র। এই রাস্তার উপর চাপ বাড়তে থাকায় বছরখানেক আগে পুরসভা রাস্তাটিকে কেন্দ্রীয় জহরলাল নেহেরু রিনিউয়াল আরবান মিশনের আওতায় চার লেন করার প্রস্তাব দেয় কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে। বাজেট ধরা হয় ৬৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু কয়েক মাস কেটে গেলেও প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় এডিডিএ-র সঙ্গে যৌথভাবে রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয় পুরসভা। খরচ ধরা হয় ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে এডিডিএ এক কোটি টাকা দেবে বলে জানায়। বাকিটা পুরসভার। টেন্ডার ডাকা হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তা আর এগোয়নি। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় ৮ মাস। রাস্তার হাল আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সংস্কার হয়নি।
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূল পরিচালিত এডিডিএ-র সঙ্গে সিপিএম শাসিত দুর্গাপুর পুরসভার দূরত্ব গড়ে উঠেছে। এডিডিএ-র নতুন বোর্ডে রাখা হয়নি দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র রথীন রায়কেও। হ্যানিম্যান সরণি সংস্কারের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। মঙ্গলবার পুরসভার ডেপুটি মেয়র শেখ সুলতান বলেন, “ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য তখনকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা অর্থ দিতে রাজি। কিন্তু এডিডি-র তরফেই কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।” বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |