মাঝরাতে তাকে আর বাবাকে বারান্দার গ্রিলে বেঁধে রেখে মাকে গলা টিপে মারে কাকা-ঠাকুমারা। তার পরে বাড়ির পিছনে শৌচাগারে ঢুকিয়ে দেহ জ্বালিয়ে দেয়।
হাওড়ার জগাছায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর দগ্ধ দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশকে এই বয়ানই দিয়েছে মৃতার সাত বছরের ছেলে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম আজমিরা বেগম (২৬)। শনিবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হতেই জগাছায় ২ নম্বর সুলতানপুরের ওই বাড়িতে চড়াও হন পাড়ার লোকজন। ভাঙচুর হয়। মৃতার স্বামী শেখ সইফুদ্দিন, দুই দেওর শেখ ভন্ডুল ও শেখ মিঠুন, শাশুড়ি মুর্শিদা বেগম, ননদের বর শেখ নাসিবুলকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাওড়া আদালত তাদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। |
লন্ডভন্ড সুলতানপুরের সেই বাড়ি। ছবি: রণজিৎ নন্দী |
আজমিরা বেগমের দুই ছেলেমেয়ে সাত বছরের শেখ সোহেল ও বছর পাঁচেকের খুশবু। সোহেল পুলিশকে জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ২টো নাগাদ মায়ের কান্নায় তার ঘুম ভেঙে যায়। বোন খুশবু তার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল। সে-ও উঠে পড়ে। কাকা-ঠাকুমারা মা-কে পেটাচ্ছিল। সোহেল ও তার বাবা প্রতিবাদ করতে গেলে দু’জনকে বারান্দার গ্রিলে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয় দুই কাকা। তার পরে ঠাকুমা মায়ের পা দু’টো চেপে ধরে আর গলা টিপে ধরে শেখ ভন্ডুল। খানিক বাদে আজমিরার মুখ দিয়ে রক্ত চুঁইয়ে আসে, নিস্তেজ হয়ে পড়ে দেহ। পিসির বর, ঠাকুমা আর দুই কাকা শৌচাগারে দেহ টেনে নিয়ে গিয়ে আগুন লাগায়। পুলিশের দাবি, সোহেল এই বক্তব্য বিচারকের কাছেও জানিয়েছে।
সকালে সুলতানপুরে গিয়ে দেখা যায়, আজমিরার শ্বশুরবাড়ির সামনে কয়েকশো লোকের ভিড়। টালির চালের দু’টি ঘর ভেঙে তছনছ। ঘরের আসবাব বাইরে এনে আগুনও লাগানো হয়েছে। পোড়া দেহ তুলে তত ক্ষণে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। শৌচাগার থেকে পোড়া কাপড় ও চামড়ার টুকরো সংগ্রহ করছে পুলিশ। প্রতিবেশী মসিরা বেগম জানান, বছর দশেক আগে বিয়ে হয় আজমিরার। সইফুদ্দিনের রোজগার ছিল না। দিনমজুর ভাইদের টাকাতেই সংসার চলত। সে কারণে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য প্রায়ই আজমিরার উপরে নির্যাতন চালানো হত বলে পাড়া-পড়শিদের অনেকেরই অভিযোগ।
মৃতার ভাই শেখ জসিমুদ্দিনের অভিযোগ, শুক্রবারও টাকার জন্য আজমিরাকে চাপ দেওয়া হয়। খবর পেয়ে তিনি গিয়ে পাল্টা শাসিয়ে আসেন, ভবিষ্যতে আর টাকা চাওয়া হলে পুলিশে খবর দেবেন। তার জেরেই দিদিকে খুন হতে হল বলে তাঁর ধারণা। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। সোহেল এবং খুশবু আপাতত তাঁদের কাছেই রয়েছে। |