পশ্চিমবঙ্গে রাজীব আবাস যোজনার সুষ্ঠু রূপায়ণে কয়েকটি শর্ত শিথিল করতে রাজ্য সরকারের আবেদন মেনে নিল কেন্দ্রীয় সরকার।
শনিবার মহাকরণে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও শহরাঞ্চলে দারিদ্র্য দূরীকরণ মন্ত্রী কুমারী শৈলজার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বৈঠকে এ ব্যাপারে ঐকমত্য হয়। বস্তিমুক্ত শহর গড়ে তুলতে ২০১২ আর্থিক বছর থেকে চালু হচ্ছে রাজীব আবাস যোজনা। দেশে এ জন্য যে ৬৫টি শহরকে কেন্দ্রীয় সরকার চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে রয়েছে কলকাতা, হাওড়া-সহ কেএমডিএ এলাকার ৪১টি পুরসভা। সেই সঙ্গে আসানসোল ও দুর্গাপুর পুরসভা।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগের সরকারের আমলে ওই পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজে বেশ কিছু ঘাটতি ছিল। সে জন্য এখন সমস্যা হচ্ছে। রাজীব আবাস যোজনার কাজ রাজ্য সরকার যাতে চটপট শুরু করতে পারে, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। ওই প্রকল্পে বস্তিবাসী, বিশেষত সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি, উপজাতি ও ভবঘুরে মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে কুমারী শৈলজাও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ওই প্রকল্পের প্রস্তুতির কাজ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাকি রয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে এবং বাস্তবোচিত পথে যাতে প্রকল্প রূপায়িত হতে পারে, তার জন্য কয়েকটি বিষয় আমার নজরে আনা হয়েছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব নমনীয়। দরিদ্র এবং স্বল্প আয়ের মানুষের স্বার্থে আমরা পশ্চিমবঙ্গকে সর্বাধিক সাহায্য করব। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যা যা পরিবর্তন চান, তা করা হবে। রাজীব আবাস যোজনা প্রকল্প রূপায়ণে সনিয়া গাঁধী এবং প্রধানমন্ত্রীও এটা চান।”
এ দিনের বৈঠকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। সরকারি সূত্রে বলা হয়, রাজীব আবাস যোজনা রূপায়ণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটি নীতি নির্দেশ পাঠিয়ে সব রাজ্যকে তার অনুসরণে নিজস্ব আইন করতে বলেছে। কলকাতা, হাওড়ার অনেক বস্তি রয়েছে ঠিকা-প্রজা স্বত্বের জমিতে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমে বস্তিবাসীদের মালিকানা দিতে বলে। কিন্তু ঠিকা-প্রজা স্বত্বের আওতায় থাকা জমির মালিক একজন হলেও সেই বস্তিতে এখন বহু পরিবার বাস করে। ফলে, বাড়ি করার আগেই মালিকানা দেওয়ার কেন্দ্রীয় শর্ত মানতে গেলে সরকারি নথিতে যে মালিকের নাম রয়েছে, তাঁকেই মালিকানা দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে সেই জমির অন্য বাসিন্দারা বঞ্চিত হবেন।
এ দিনের বৈঠকে রাজ্য সরকার প্রস্তাব দেয়, বস্তিতে বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে তার পরে বস্তিবাসীদের প্রত্যেক পরিবারকে মালিকানা দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে প্রকল্পের খরচ চালানোর জন্য প্রথা মতো এক কিস্তির বদলে প্রথমেই দু’কিস্তি টাকা পেতে চায় রাজ্য। প্রস্তাবগুলি মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। এক সরকারি মুখপাত্র জানান, রাজীব আবাস যোজনায় দু’লক্ষ বস্তিবাসীকে বস্তির পরিবেশমুক্ত বাসগৃহ তৈরি করে দেওয়া হবে। এর মধ্যে সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা করে আবাসন তৈরি হবে সোনারপুর, মেটিয়াবুরুজ, তিলজলায়। যে বস্তিবাসী যেখানে থাকেন, সেখানেই তাঁর নতুন গৃহের ব্যবস্থা হবে।
পরে, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, শহরের দরিদ্র মানুষদের জন্য এখন যে ‘বেসিক সার্ভিসেস ফর আরবান পুওর’ প্রকল্প চালু আছে সেই খাতে কলকাতা পুরসভার হাতে ১০০ কোটি টাকা পড়ে আছে। এ দিনের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ ওঠে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে তিনি বলেছেন, ২০০৭ সালে ওই প্রকল্পের যে খরচ নির্ধারণ করা হয়, সেই হিসাবেই ওই টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই সময় কাজটি হয়নি। এখন সেই প্রকল্পের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। ফলে পুরসভা ওই প্রকল্পে কোনও কাজ আপাতত করছে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নতুন করে প্রকল্প পাঠাতে বলেছেন। পুরসভা শীঘ্রই তা পাঠিয়ে দেবে। |