ধান-চাল বিক্রি করে কৃষকেরা সরকারি সহায়ক মূল্যের পুরোটা হাতে পান না গোটা দেশ জুড়েই এমন অভিযোগ শোনা যায় দীর্ঘকাল ধরে। এর প্রেক্ষিতে নগদ টাকার পরিবর্তে চেকে ধান-চালের দাম মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারই সূত্র ধরে এ বার ধান-চাল সংগ্রহের মরসুমে এ রাজ্যেও এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। সরকার সহায়ক মূল্য হিসেবে যে টাকা বরাদ্দ করত, সেটা চাষিরা হাতে পেতেন এজেন্ট মারফত। অভিযোগ, টাকাটা হাতঘুরে আসাতে চাষিরা বরাদ্দের পুরোটা পেতেন না। চেকে টাকা দিলে এই সমস্যা থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ শনিবার জানান, এ বার কৃষকদের দাম মেটানো হবে চেকে। জেলাশাসকদের তাই জরুরি ভিত্তিতে সব কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা তা কার্যকর করছি। যাতে সত্যিই চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল কেনা হয়। কৃষকেরা সংগ্রহ মূল্যের পুরো টাকা হাতে পান।” মুখ্যসচিব স্বীকার করেন, কৃষকেরা ধান-চাল বিক্রি করে সরকার নির্ধারিত সংগ্রহ মূল্য পেতেন না বলে অভিযোগ ছিল এ রাজ্যেও।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অভিযোগ করেন, “ধান-চাল সংগ্রহের জন্য বছরে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। তার মধ্যে ৪০-৫০ কোটি টাকার বেশি নয়ছয় হত। তা রুখতেই চেকের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” খাদ্যমন্ত্রী জানান, এখন থেকে খাদ্য দফতর সব খরচই করবে চেকের মাধ্যমে।
জেলাশাসক, জেলার খাদ্য নিয়ামক, সমবায়সচিব, খাদ্যসচিব, কৃষিবিপণন সচিব এবং এফসিআই-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীও। সেখানেই মুখ্যসচিব বলেন, রাজ্যে এ বার ধান উৎপাদন ১ কোটি ৫০ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অথচ, রাজ্য সরকারের চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২০ লক্ষ মেট্রিক টন। এতে অন্য রাজ্যের খাদ্যকর্তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব বলেন, “উৎপাদন যথেষ্ট হলেও প্রায় কোনও বারই চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আমরা ছুঁতে পারি না। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ লক্ষ মেট্রিক টন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাড়ে ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন সংগ্রহ করা গিয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ২০ লক্ষ টন ধরা হলেও চেষ্টা থাকবে ৩০ লক্ষ টন চাল সংগ্রহ করা। এত দিন জেলাশাসকেরা এই কাজে কেবল নজরদারি করতেন, এখন থেকে তা তাঁদের অবশ্য করণীয় কাজ বলে গণ্য হবে।” |