বিধায়কদের প্রযুক্তি-বান্ধব করার পথ আরও খোলামেলা করতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানা।
বাম আমলের প্রচলিত রীতি ভেঙে এ বার ল্যাপটপ কেনার জন্য সরাসরি বিধায়কদের হাতেই টাকা দিতে চাইছে রাজ্য বিধানসভা। যাতে বিধায়কেরা নিজেদের পছন্দের মডেলের ল্যাপটপ, এমনকী আইপ্যাডও পছন্দসই জায়গা থেকে কিনে নিতে পারেন। ‘পরিবর্তনে’র জমানায় বিধানসভার সচিবালয় মহাকরণে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, ল্যাপটপ কেনার জন্য বিধায়ক পিছু ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হোক। চাইলে বিধায়কেরা নিজেরা আগে ল্যাপটপ কিনে বিল জমা দিতে পারেন বিধানসভায়। ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বিল থাকলে তা মিটিয়ে দেবে বিধানসভা। এই প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে অর্থ দফতরের সম্মতি এখনও এসে পৌঁছয়নি। তবে মহাকরণ এবং বিধানসভা সূত্রের খবর, প্রস্তাবের ‘বাস্তবতা’ বিচার করে তাতে অনুমোদন দিতে পারে রাজ্য সরকার।
 যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই বিধায়কদের ল্যাপটপ দেওয়ার প্রকল্প চালু হয়েছিল। কিন্তু তখন চিরাচরিত সরকারি ‘নিয়ন্ত্রণ’ মেনে ল্যাপটপ বাছাইয়ে বিধায়কদের কোনও সুযোগ থাকত না। সরকারি প্রক্রিয়ায় কেনা ল্যাপটপের মডেলই তাঁদের নিতে হয়েছিল। নিজেদের প্রয়োজনমতো ‘স্পেসিফিকেশন’-এর সুযোগ ছিল না। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রের খবর, পরবর্তী কালে অনেক বিধায়কই ওই ল্যাপটপ নিয়ে অভিযোগ জানাতে এসেছেন। কিন্তু কোথা থেকে কোন ল্যাপটপ কেনা হয়েছে, তার কোনও তথ্য চটজলদি না-মেলায় ‘সার্ভিসিং’-এর অসুবিধা হয়েছে। বেশ কিছু বিধায়ক অকেজো ল্যাপটপ সারাতে পারেননি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়েই এ বার অন্য পথে হাঁটতে চাইছে বিধানসভা। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “সব দিক ভেবেচিন্তেই আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি বিধায়কদের টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য। এখনকার বাজারদর মেনে প্রতি বিধায়কের জন্য ৫০ হাজার টাকার কথা বলা হয়েছে। বিধায়কেরাই তাঁদের পছন্দের যন্ত্র কিনে নিতে পারবেন।”
বস্তুত, রাজনৈতিক ‘পরিবর্তনে’র জমানায় প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে আগ্রহী রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম-ও। বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রই বিধানসভার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এ বার ল্যাপটপের বদলে বিধায়কদের আইপ্যাড দেওয়া হোক। সাধারণ ল্যাপটপের চেয়ে আইপ্যাড যেমন প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক আধুনিক, তেমনই তা সঙ্গে নিয়ে ঘোরাও অনেক সহজ। বিধানসভা সেই প্রস্তাবই গ্রহণ করেছে ‘ঘুরপথে’। বিধায়কদের হাতে ল্যাপটপ থাকবে না আইপ্যাড তা ‘চাপিয়ে’ না-দিয়ে টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়ে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, থ্রি-জি এবং ওয়াই-ফাই-সম্পন্ন আন্তর্জাতিক বাজার-চলতি আইপ্যাড ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এখন পাওয়া যায়। যে মডেল ওই টাকায় মেলে, তার ‘মেমরি’ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। সুতরাং, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে বিধায়কদের আইপ্যাড-ধারী হতে কোনও বাধা নেই!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সম্প্রতি আইপ্যাড ব্যবহার শুরু করেছেন। সেই যন্ত্র অবশ্য বিধায়ক ‘কোটা’য় পাওয়া নয়। তাঁর নিজেরই কেনা। রাজ্যের কোষাগারে টানাটানির জেরে বিধানসভার প্রস্তাবে মমতার সরকারের সম্মতি মিলবে কি না, তা-ই নিয়ে সংশয় আছে বিধায়কদের একাংশের। কিন্তু তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতা বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী নীতিগত ভাবে মনে করেন, মন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন, ভাতা-সহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা আরও ভাল হওয়া উচিত। যাতে তাঁরা বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে তাল রাখতে পারেন। সেই জন্যই বিধানসভার প্রস্তাবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই সরকারের সম্মতি মিলবে বলে আমরা আশাবাদী।”
প্রযুক্তি ব্যবহারে বাঙালির ‘আড়ষ্টতা’র বদনাম কাটাতে বিধায়কদের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতাই অগ্রণী হবেন, আশায় আছে বিধানসভা! |
