২৪ ঘণ্টা আগেই পেট্রোলের দাম বাড়া নিয়ে মনমোহন সরকারকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ক্ষুব্ধ শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। আর তার পরেই আজ জঙ্গলমহলের পরিকাঠামো উন্নয়নে ঢালাও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারকে চিঠি দিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। এমনকী পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে এডিবি-র টাকায় প্রস্তাবিত সড়কের পরিমাণ একেবারে দ্বিগুণ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মমতাকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলমহলে সফরে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
জঙ্গলমহলে শিল্পায়ন ও পরিকাঠামো উন্নয়নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘সব রকম’ সাহায্যের আশ্বাস আগেও দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু এ ভাবে কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পরিমাণ দ্বিগুণ করে দেওয়ার আশ্বাস, তার নজির বেশ কম। কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অর্থে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া অংশে পাঁচশ কিলোমিটারের পরিবর্তে এক হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দিচ্ছে তাঁর মন্ত্রক। জয়রাম চিঠিতে এ-ও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের  আওতায় পশ্চিমবঙ্গে ১২৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। এ জন্য ৬৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ বার অতিরিক্ত আরও এক হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক তৈরি হবে রাজ্যে।
এডিবি-র টাকায় সড়ক নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে গত ১১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ক্ষমতাশীল কমিটির বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কমিটির তরফে রাজ্যের প্রতিনিধিদের কাছে ২০০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিতে বলা হয়। তখনই রাজ্যে তরফে আর্জি জানানো হয়েছিল, এই পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়ানো হোক। রাজ্যের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব চায় কেন্দ্র। কিন্তু আজ জয়রাম তা একেবারে দ্বিগুণ করে দিলেন। তবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে এ কথাও বলা হচ্ছে, এর পর কিন্তু রাজ্যের দায়িত্ব। শুধু সড়ক নির্মাণ করলেই চলবে না, তার গুণমান যাতে যথাযথ থাকে তার ওপর নজর রাখতে হবে রাজ্য সরকারকেই।
জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে আলোচনা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রের তরফে সম্প্রতি মমতার সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলছিলেন জয়রাম। পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তাঁর অসন্তোষ জানাতেই কাল জয়রামকে ফোন করেছিলেন মমতা। তখনই জয়রামকে জঙ্গলমহল সফরের জন্য অনুরোধ করেছিলেন মমতা। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী জয়রামকে আগেই জানিয়েছিলেন, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় শিল্প গড়ার উপযোগী এক হাজার একর জমি রাজ্যের হাতে রয়েছে। ওই জমিতে লগ্নি টানতে শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। মমতার প্রস্তাব ছিল, জঙ্গলমহলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্রও এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা নিক। গত কাল মমতার সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন জয়রাম। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের খবর, জয়রাম মমতাকে জানিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জঙ্গলমহলে সফরে যেতেও আগ্রহী। এ জন্য মমতাকেই তিনি দিন স্থির করতে বলেছেন। বস্তুত মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার সড়ক, জল সরবরাহ, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, স্কুল-সহ সার্বিক উন্নয়নে ইতিমধ্যে ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ গ্রহণ করেছে কেন্দ্র। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাও রয়েছে। রমেশ গত কাল মমতাকে জানান, রাজ্যের দাবি মেনে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াকে ওই প্রকল্পের আওতায় আনাতে চায় কেন্দ্রও। এ ব্যাপারে যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুয়ালিয়ার সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। |