জঙ্গলমহল
ধুঁকছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, তবু নিয়োগের নির্দেশ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিদ্যুতের মাসুল বাড়াতে না পেরে এমনিতেই ধুঁকছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। এই অবস্থায় এ বার জঙ্গলমহল থেকে একশো কর্মী নিয়োগের ফরমান জারি হয়েছে তাদের উপর। মাওবাদী প্রভাবিত ২৩টি ব্লক থেকে ‘সহযোগী শ্রমিক’ পদে নিয়োগের এই সরকারি নির্দেশ আরও বিপাকে ফেলেছে বণ্টন সংস্থাকে। যেখানে বিদ্যুৎ কেনার টাকারই টানাটানি, সেখানে এই একশো জনের বেতন কী ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে মাথায় হাত পড়েছে সংস্থার।
সরকারের ওই নির্দেশ আসার পর আগামী ১২ নভেম্বর তড়িঘড়ি সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বকলমে নির্দেশ যে হেতু মুখ্যমন্ত্রীর, তাই নিয়োগের প্রস্তাব সহজেই পাশ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্তারা। কিন্তু সংস্থার কর্মীদের প্রতি মাসেই বেতন দিতে গিয়ে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে নতুন নিয়োগের বোঝা চাপলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় বিভিন্ন পদে ২২ হাজার কর্মী রয়েছেন। এঁদের প্রতি মাসের বেতন বাবদ খরচ ৬৬ কোটি টাকার মতো। এক শীর্ষ কর্তা জানান, সিইএসসি তাদের কাছ থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ কেনে। এই বাবদ তারা পায় ৬০ কোটি টাকা। এই টাকার সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত করে কর্মীদের বেতন মেটানোর চেষ্টা হয়। এর উপর আরও একশো কর্মীকে নিয়োগ করে তাঁদের মাসিক গড়ে ১৫ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে কি করে, তা জানি না।
গড়ে ১৫ হাজার টাকা করে একশো জনের বেতন বাবদ মাসে মোট খরচ বাড়বে ১৫ লক্ষ টাকা। বছরে এক কোটি ৮০ লক্ষ। মাসে এই খরচ খুব বড় মাপের না হলেও সংস্থার এখন যা অবস্থা, তাতে এই টাকাও জোগাড় করতেও নাভিশ্বাস উঠে যাবে। এ কথা বুঝিয়ে দিলেন সংস্থার কর্তাব্যক্তিরাই।
কোন পরিস্থিতিতে এ কথা বলছেন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তারা? যখন মাসুল না বাড়াতে পারায় চলতি আর্থিক বছরে প্রথম ছ’মাস বণ্টন সংস্থার শুধু রাজস্ব খাতে ক্ষতি হয়েছে ২,১৭২ কোটি টাকার মতো। এর সঙ্গে মূলধনী খাতে লোকসানের বহর প্রায় ৬৮ কোটি। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে সংস্থার মাথায় আর্থিক লোকসানের বোঝা চেপেছে ২,২৪০ কোটি টাকার মতো। প্রতি মাসেই আয় ও ব্যয়ের ফারাক বাড়ছে। পরিস্থিতি এমনই যে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনেও তার টাকা মেটাতে পারছে না বণ্টন সংস্থা। একই সঙ্গে বলা যায়, উন্নয়ন পর্ষদেরও ঘাড়েও ৩,২০০ কোটি টাকার আর্থিক ঘাটতি রয়েছে। যে কারণ তারাও আবার কোল ইন্ডিয়াকে কয়লা বিক্রি বাবদ তাদের পাওনা ৫৫০ কোটি টাকা দিতে পারছে না। বস্তুত, আর্থিক বেহাল দশা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের কাছে ২০০ কোটি টাকা অনুদান চেয়েছে বণ্টন সংস্থা। কিন্তু ওই টাকা আদৌ পাওয়া যাবে কি না, তাই নিয়ে ঘোরতর সংশয় রয়েছে সংস্থার কর্তাদের।
এর পাশাপাশি সরকার এমন নির্দেশ দিতে পারে কি না, তাই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংস্থার কর্তাদের একাংশ। কারণ, ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ভেঙে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থা তৈরি হয়েছিল। ওই সময় রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেয়, নতুন দুই সংস্থার কোনও আর্থিক দায় রাজ্য নেবে না। অর্থাৎ, দুই সংস্থাকে নিজেদের যোগ্যতায় সংস্থা চালাতে হবে। এমনকী, কর্মীদের বেতনের সংস্থানও করতে হবে তাদের। রাজ্য সরকার কোনও অনুদান দেবে না। অথচ, সেই সরকারই বণ্টন সংস্থাকে বিদ্যুতের মাসুল বাড়াতে না দিয়ে, নতুন কর্মী নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে ক্রমশ রুগ্ণ সংস্থা হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
জঙ্গলমহলের ২৩টি ব্লক মাওবাদী প্রভাবিত। ওই ব্লকগুলির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থান, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল-সহ একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। সেই প্রতিশ্রুতিরই কারণেই যে নিয়োগের নির্দেশ এসেছে, বণ্টন সংস্থার কর্তারা তা প্রায় নিশ্চিত। এতে সংস্থার ঘাড়ে আর্থিক বোঝা আরও চাপবে বলেই তাঁরা মনে করছেন। বলা হয়েছে, ওই যুবকদের নিয়োগ করার পর ছ’মাসের মধ্যে বিভিন্ন আইটিআই-তে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে। প্রশিক্ষণ শেষ হলে বিভিন্ন সাবস্টেশেন তাঁদের নিয়োগ করতে হবে।
২০০৯-১০-এর আর্থিক বছরের হিসাব মতো বর্তমানে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুতের মাসুল নিচ্ছে বণ্টন সংস্থা। গত কয়েক মাসে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে মাসুল বাড়ানোর জন্য আবেদন করার সুযোগ ছিল তাদের। তাতে সংস্থার আর্থিক চেহারা ফিরত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের ঘাড়ে তিনি বোঝা চাপাতে নারাজ। তাই কমিশনের কাছে মাসুল বাড়ানোর আবেদন জানাতে পারেনি বণ্টন সংস্থা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.