ট্রেভর মর্গ্যান বনাম হঠাৎ তৈরি হওয়া ক্ষোভের তুবড়ি।
ফুটবল বুদ্ধি আর অঙ্ক বনাম দৌড় এবং দৌড়।
উগা ওপারা বনাম লাইবেরিয়ান জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক জন-এর দ্বৈরথ। অ্যালান গাও বনাম ওর্জি পেনের পজিশন দখলের যুদ্ধ।
রবিবারের যুবভারতীতে হরেক লড়াই নানা মোড়কে হাজির।
তাঁর ষোলো মাসের লাল-হলুদের কোচিং জীবনে প্রথম বার পাহাড়ি বিছেদের মুখোমুখি হতে চলেছেন ব্রিটিশ কোচ মর্গ্যান। তাঁর ‘বন্ধু’ স্টিভ ডার্বি মাসখানেক আগে যে বিছের কামড়ে ধরাশায়ী হন। খুইয়েছিলেন চাকরি। সেই লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে নামার আগে ইস্টবেঙ্গল কোচের মনোভাবটা ঠিক কী রকম, তা জানানোর জন্য শনিবার সকালের ঘণ্টাখানেকের অনুশীলন যথেষ্ট। সাধারণত ম্যাচের আগের দিন প্রথম দল প্রায় দেখিয়ে দেন মর্গ্যান। এ দিন দু’পর্বে তিনি যা অনুশীলন করালেন তাতে ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমও অন্ধকারে। পেন, গাও, রবিন সিংহ, হরমনজিৎ খাবরা, খেমতাং পাইতেএদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তো খেলালেনই, একবার উগা ওপারাকে রিজার্ভের দলে রেখেও অঙ্ক কষে দেখলেন। পরে সাংবাদিকদের বললেন, “লাজংকে ফেড কাপে দেখেছি। সেমিফাইনাল ম্যাচটা ওরা হেরে গিয়েছিল শেষ মুহূর্তে। জেতা উচিত ছিল ওদের।” |
ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের নতুন সাজ। ছবি: উৎপল সরকার |
পাহাড়ি দল মানেই চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া ফিটনেস আর তীব্র দৌড়। যাঁর বিচ্ছুরণে পুণেতে ফেড কাপে ব্যারেটো-ওডাফা জুটি বলুন, কিংবা বেটো-র মতো তারকাও চোখে সর্ষেফুল দেখেছিলেন। আই লিগের এই ম্যাচে খেলতে নামার আগে সেটা নিশ্চয়ই মাথায় থাকছে মর্গ্যানের। সে জন্য চতুর লাল-হলুদ কোচও দোটানায় পড়ে প্রথম এগারো সাজানোর জন্য আরও কিছু সময় নিচ্ছেন। কিন্তু গতির সঙ্গে তো এ দিন লাজং টিমে জুড়েছে ক্ষোভের বারুদ। যার জেরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ দিন কথাই বলেননি কোচ প্রদ্যুম রেড্ডি। রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল ফুটবলারদের উপরও। ঝামেলাটা যুবভারতীতে সময় মতো অনুশীলনে নামা নিয়ে। লাজং কোচের দাবি, তাঁদের সকাল দশটায় অনুশীলনের জন্য মাঠ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। তাঁরা হোটেলের নীচে দাঁড়িয়েও ছিলেন সকাল ন’টা থেকে। কিন্তু লোকাল ম্যানেজার আসেন দশটার সময়। শুধু তাই নয়, প্রদ্যুমের দাবি, যাতে ইস্টবেঙ্গল নির্ধারিত সময়ের পরেও অনুশীলন করতে পারে, সে জন্য ইচ্ছে করে স্টেডিয়ামের একটি বন্ধ গেটের সামনে তাঁদের টিম-বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল দীর্ঘক্ষণ। “লোকাল ম্যানেজার ক্ষমা না চাইলে আমরা কেউ কথাই বলব না,” বলে মাঠ ছাড়লেন অনাবাসী ভারতীয় কোচ প্রদ্যুম। এমনকী টিম নিয়ে হোটেলে ফেরার সময় বাসেও উঠতে দেননি লোকাল ম্যানেজারকে। সংগঠকদের ‘অন্যায়’ কাজের দায় কেন মিডিয়ার উপর পড়বে, তা কোচ না বুঝলেও লাজংয়ের ফুটবলাররা অবশ্য বোঝেন। লাজংয়ের এক নম্বর স্ট্রাইকার জন তো বললেনও, “কাল মাঠে দেখাব ওপারা না আমি কে বড় ফুটবলার।”
শুরুতেই পয়েন্ট নষ্ট করে তীব্র চাপে পড়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। চাকা ঘোরাতে মুম্বই এফসি-র বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও নাটকীয় বড় জয়। মর্গ্যান বললেন, “জয়টা দরকার ছিল। সমালোচনাটা কয়েক দিনের জন্য অন্তত বন্ধ করা গেছে।” কিন্তু কেন তিনি ‘কয়েক দিন’ এমন শব্দ প্রয়োগ করলেন তা নিয়ে অবশ্য আলোচনা শুরু হয়েছে। জয়ে ফেরার পরেও কি ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুম কি অশান্ত? পেন বনাম গাও টানাপোড়েন কি এখনও ‘ভোগাচ্ছে’ মর্গ্যানকে? নাকি লাজংয়ের দৌড় নিয়ে রাতের ঘুম ছুটেছে তাঁর? “লাজংয়ের দৌড় রুখতে আমি ওদের হাঁটুতে মারতে বলব ভাবছি,” হাসতে হাসতে বলেও ফেললেন একবার ইস্টবেঙ্গল কোচ।
হাসি থেকেই অবশ্য ছিটকে বেরোয় ব্রিটিশ দাম্ভিকতা। লাজং-বিছে নির্বিষ করতে হয়তো মর্গ্যানও খুঁজছেন পাল্টা ‘গতির বিষ’।
|
মোহনবাগান: মুম্বই এফসি (পুণে ৩-৩০)
ইস্টবেঙ্গল: লাজং এফসি (যুবভারতী ৬-৩০)
ডেম্পো: পৈলান অ্যারেজ (মারগাঁও)
চিরাগ কেরল: এয়ার ইন্ডিয়া (কালিকট)
চার্চিল ব্রাদার্স: হ্যাল (বেঙ্গালুরু)। |