সত্যি কি জানুয়ারির অ্যাডিলেডে তাঁর অবসর ঘটছে? সচিনের শততম কবে ঘটবে তাঁর মনে হচ্ছে?
রবিবার কোটলায় শুরু নতুন সিরিজকে তিনি কী চোখে দেখছেন? আনন্দবাজারকে এক্সক্লুসিভ
সাক্ষাৎকার দিলেন শনিবার রাহুল দ্রাবিড়। নয়াদিল্লির হোটেলে বসে। |
প্রশ্ন: সচিনের শততম সেঞ্চুরি সম্পর্কিত এস এম এস জোক-টা শুনেছেন তো?
রাহুল: কোনটা?
প্র: ওই যে পেট্রোলের দাম ৭৩। সচিন ৯৯। কে আগে সেঞ্চুরি করবে?
রাহুল: হাঃ। না, আগে শুনিনি।
প্র: আপনার কী মনে হয়, কে আগে পৌঁছবে?
রাহুল: সত্যিই পেট্রোলের যেমন হু-হু করে দাম বাড়ছে, কোন দিন সকালে উঠে দেখব, দুম করে একশোয় পৌঁছে গিয়েছে (হাসি)।
প্র: সচিনেরটা কবে হবে মনে হচ্ছে?
রাহুল: আমার আশা, এই সিরিজেই হয়ে যাবে। সচিনকে দেখলামও নেটে খুব স্বচ্ছন্দে ব্যাট করছে।
প্র: আর একটা ব্যাপারে জল্পনা। ২৮ জানুয়ারি অ্যাডিলেড ওভালে কি শেষ হয়ে যাচ্ছে রাহুল দ্রাবিড়ের ক্রিকেট জীবন?
রাহুল: (কোনও উত্তর নেই খানিকক্ষণ)... এখনও ঠিক করিনি। সামনে তিন মাসে সাতটা টেস্ট। সেই ম্যাচগুলোতে কী করে ভাল খেলা যায় তার জন্য কনসেনট্রেট করছি।
প্র: আপনার বরাবরের ক্রিকেট দর্শন ছিল মাথা উঁচু করে সরে যাওয়া। সে দিক থেকে অ্যাডিলেড-বিদায় আদর্শ। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষ হওয়ার সঙ্গেই। বিভ্রান্তি ঘটছে কারণ আপনি আবার ইংল্যান্ডে বলেছিলেন, এ ব্যাপারে আপনি এখন সচিন-মডেল অনুসরণ করেন। বর্তমানে মন ডুবিয়ে রাখার মডেল।
রাহুল: এখনও ওই মডেলটাই আমি অনুসরণ করি। বেশি আগে ভেবে লাভ নেই। যেমন যেমন ঘটছে তার সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। অবসর জরুরি মন হলে হবে-- এখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার কোনও মানে নেই।
প্র: ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তিনটে টেস্ট?
রাহুল: আশা করব কোটলায় ভাল সূচনা করা যাবে। টেস্ট সিরিজটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট। প্রথমত ইংল্যান্ডে খারাপ খেলাটা মুছে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত এই সিরিজ থেকে জমকালো আত্মবিশ্বাস তৈরি করে সেটাকে লগ্নি করতে হবে অস্ট্রেলিয়ায়। কোটলা মরসুমের টাটকা উদ্বোধন। আশা রাখি শুরুটা ভাল হবে।
প্র: মধ্যিখানে যখন ইংল্যান্ডের সঙ্গে ওয়ান ডে সিরিজ চলছিল, ওই সময়টা কী করলেন?
রাহুল: পরিবারের সঙ্গে দেদার মজা করে কাটালাম। কত কত বছর পর দেওয়ালিতে যে বাড়ির সবার সঙ্গে মজা করলাম, নিজেই মনে করতে পারব না। দারুণ অভিজ্ঞতা। ছেলেদের সঙ্গে বাজি পোড়ানো। রংমশাল জ্বালানো।
প্র: ইংল্যান্ড সিরিজের পর অতর্কিতে ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা রংমশাল আপনিই হয়ে গিয়েছেন। টেস্ট সিরিজের তিন মাস বাদেও আপনাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস অব্যাহত।
রাহুল: দেখুন, ভাল খেলার আনন্দটা আমার সত্যিই হত যদি টিম ভাল খেলত। যদি টিম জিতত। একটা খচখচানি তো ভাল খেলার মধ্যেও থেকে যায় যে, টিম জেতেনি। মূল্যহীন হয়ে গেল কোথাও পারফরম্যান্সটা।
প্র: তবু দেশে ফিরে আপনি আবিষ্কার করেননি যে, লোকে আপনাকে অন্য চোখে দেখছে? কোথাও একটা বাড়তি শ্রদ্ধা এসেছে যে, এত বড় বিপর্যয়েও এই লোকটা একা খেলেছে! একা লড়েছে!
রাহুল: না তেমন কিছু নয়। ভাল খেললে যেমন অভিনন্দনসূচক এস এম এস আসে তেমনই। বাড়তি কিছু ঘটেনি।
প্র: রাহুল আপনি আন্ডার স্টেটমেন্টের বাদশা। ইংল্যান্ডে আপনার ব্যাটিং নিয়ে কেবল ক্রিকেট জনতা কেন, সব পেশার মানুষ অভিভূত। আপনি দেশে ফিরে বোঝেননি?
রাহুল: আসলে আমি তো খেলার সময় কাগজ-টাগজ বিশেষ পড়ি না। দেশের ফোনও তত আসেনি। ইংল্যান্ডেই ছিলাম। তা ছাড়া বেঙ্গালুরু এমন শহর যেখানে খুব আরামসে প্রাইভেটলি কাটানো যায়। এগুলো এত বোঝাটোঝা যায় না। |
প্র: আপনার বেঙ্গালুরুর গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথই কিন্তু কলকাতার পুজো উদ্বোধন করতে এসে মণ্ডপে মাইক হাতে বলেছেন, রাহুলের লন্ডনের এক-একটা সেঞ্চুরি এক-এক ধরনের অনন্য ইনিংস। বাংলার শীর্ষস্থানীয় কবি জয় গোস্বামী আপনাকে নিয়ে বিশাল লিখেছেন। ব্লগ-এ নামী সমাজ বিজ্ঞানীরা খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছেন, আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি কী? শৃঙ্খলা না মন? আর আপনি বলছেন মানুষের প্রতিক্রিয়া বদলায়নি!
রাহুল: হতে পারে যে, মাঝে দু’-তিন বছর আমার খারাপ ফেজ যাচ্ছিল। বড় রান পাচ্ছিলাম না। তার পর ইংল্যান্ডে ঘটেছে বলে লোকের এত চোখে পড়ছে। কিন্তু আমার নিজের মনে হয় বড় রান আমি অতীতেও অনেক করেছি। সাফল্যও অতীতে বেশি ছিল। যদি ২০০৩-০৫ এই পিরিয়ডটা ধরেন।
প্র: ঠিক আছে। কিন্তু শেষ ওয়ান ডে ম্যাচের বিদায় অভ্যর্থনা! কখনও ভেবেছিলেন আপনার শেষ ওয়ান ডে ম্যাচ ঘিরে বিদেশে এমন আবেগ জড়িত দৃশ্যকল্প তৈরি হতে পারে?
রাহুল: সত্যিই ভাবিনি। এখনও অমি ওই অভ্যর্থনার সামনে আপ্লুত এবং কৃতজ্ঞ।
প্র: এমন একটা লোক, যে ওয়ান ডে ক্রিকেটার হিসেবে দুর্ধর্ষ শ্রেণিভুক্ত নয়। যে মধ্যিখানে টিম থেকে বাদ পড়ে পরিষ্কার হিসেবের বাইরে চলে গিয়েছিল। সেই লোকটাই আচমকা ফিরে এল আর এমন আবেগঘন সংবর্ধনা নিয়ে বেরিয়ে গেল। স্টিভ ওয় বাদ দিলে এমন বিদায় সাম্প্রতিক সময়ে আর কে পেয়েছেন?
রাহুল: আমি একদম এক মত। আমার শেষ ওয়ান ডে ঘিরে এই ছবি তৈরি হতে পারে ভাবতেই পারিনি কখনও। আমাকে যে ওরা দলে ফেরত নেবে আশাও করিনি। আসলে মানুষের ভাগ্য যে মানুষকে কোথায় নিয়ে যায় সে স্বপ্নেও তার কোনও দিশা পায় না।
প্র: ভাগ্য না ক্রিকেট ভাগ্য? যোগ্যকে যে শেষ বিচার দিয়ে গেল!
রাহুল: হতে পারে ক্রিকেট ভাগ্য। কোনও ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে। তাই এখন আর আমি প্রশ্ন করি না। যেমন যেমন ঘটছে সেই অনুযায়ী নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রাণপণ ঝাঁপাই। |