মাওবাদীদের ডেরা থেকে ছাড়া পেয়ে প্রথম ফোনটাই করেছিলেন স্ত্রীকে। বললেন, “ভাল আছি। ওরা ছেড়ে দিয়েছে। বাড়ি আসছি।” লালমোহন বৈদ্যর কথা শুনে তখন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাঁর স্ত্রী শীলা।
বিহারের জামুইয়ে প্রায় পাঁচ দিন মাওবাদীদের ডেরায় বন্দি ছিলেন বসিরহাটের ধান্যকুড়িয়ার পূর্ব নেহালপুরের বাসিন্দা লালমোহনবাবু-সহ ১৫ জন সড়ককর্মী। শনিবার ভোরে মুক্তি পেয়েছেন সকলে। পটনার পুলিশ জানায়, চারারিয়া জঙ্গলের কাছাকাছি জায়গায় সকলকে ছেড়ে দেয় মাওবাদীরা। বছর দু’য়েক ধরে কর্মসূত্রে বিহারে থাকতেন লালমোহনবাবু। জামুইয়ে ভার্নার নদীর উপরে সেতু নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে একটি বেসরকারি নির্মাণ সংস্থা। সেখানেই কর্মরত বছর উনচল্লিশের লালমোহন। গত সোমবার গভীর রাতে ওই সংস্থার অফিসে জনা পঞ্চাশ মাওবাদী হানা দেয়। তুলে নিয়ে যায় ১৫ জনকে।
টেলিফোনে লালমোহনবাবু শোনালেন গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতার কথা। বললেন, “একটা বড় দল এসেছিল। আমাদের চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলে।” লালমোহন জানালেন, প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে গাড়ি থামে। জঙ্গলের পথে ঘণ্টা দু’য়েক হাঁটানো হয় সকলকে। একেক জনকে পাহারা দিচ্ছিল দু’জন করে বন্দুকধারী। একটা জলাশয়ের ধারে এসে চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। মুখ-চোখ ধুয়ে নিতে বলা হয়। খেতে দেয় বিস্কুট। অপহরণকারীরা হিন্দিতে বলে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কাজ মিটে গেলেই সকলকে ছেড়ে দেওয়া হবে। শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছিল সকলকে। দুপুরে ছিল ডাল-ভাত।
জঙ্গলের রাস্তায় এক ডেরা থেকে অন্য ডেরায় হাঁটতে হাঁটতে ক্রমে ধৈর্যচ্যুতি ঘটছিল অপহৃতদের। লালমোহন বলেন, “বৃহস্পতিবার ওদের বলি, এ ভাবে আর পারা যাচ্ছে না। আমরা সামান্য কর্মী। পেটের দায়ে কাজ করতে এসেছি। হয় আমাদের মেরে ফেলুন, না হলে ছেড়ে দিন।”
লালমোহন জানান, ওই দিন থেকে তাঁরা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। মাওবাদীদের ধমকেও ভয় পাননি কেউ। শুক্রবার সন্ধে নাগাদ হঠাৎই মাওবাদীরা এসে জানায়, সকলকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ফের ঘণ্টা তিনেক সকলকে হাঁটায়। পরে চোখ বেঁধে একটা বড় গাড়িতে তুলে দেয়। লালমোহন জানান, ভোরের আলো ফোটার মুখে কালাপাহাড়ির কাছে নামিয়ে দেয় সকলকে। চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। প্রধান সড়কের কাছে এসে কোনও মতে একটা গাড়ি জুটিয়ে করে সকলে ফেরেন জামুইয়ে।
পটনায় এডিজি (সদর) রবীন্দ্র কুমার জানান, মাওবাদীরা মোটা টাকা তোলা দাবি করেছিল ওই সংস্থার কাছ থেকে। দাবি পূরণে চাপ দিতেই ওই কর্মীদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের খুঁজতে জঙ্গলে যৌথ অভিযানে নেমেছিল সিআরপি, স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ও জেলা সশস্ত্র পুলিশ। সেই চাপেই মাওবাদীরা অপহৃতদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। |