জঙ্গলমহল, পাহাড়, সিঙ্গুর এবং শিল্প নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে কলকাতাকে তার পুরনো গরিমা ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার মহাকরণে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী কুমারী শৈলজার সঙ্গে বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার রবীন্দ্র সদন, নন্দন এবং অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বর নিয়ে ‘টেগোর ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল সেন্টার’ তৈরির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত ওই আন্তর্জাতিক মানের সংস্কৃতিকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রীর কাছে তিনি এ দিন ১,০০০ কোটি টাকার অনুদান চেয়েছেন। ওই কেন্দ্রের রূপরেখা ও পরিকল্পনা করার জন্য রাজ্য সরকার উপদেষ্টা কমিটি তৈরি করেছে। সেই উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান রাখী সরকার। তিনিই ‘টেগোর ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল সেন্টার’ তৈরির ব্যাপারে বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করবেন। |
মহাকরণে কুমারী শৈলজার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ আচার্য |
“রবীন্দ্র সদন, নন্দন এবং অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এখন খাপছাড়া ভাবে রয়েছে’’ বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রস্তাবিত টেগোর ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল সেন্টারে সেগুলিকে একই ছত্রছায়ায় এনে পূর্ণাঙ্গ একটি সংস্কৃতিকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। সে জন্য অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলবে রাজ্য সরকার।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘কেমোমা’কে (কলকাতা মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট) সাহায্য করার জন্যও তিনি এ দিনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রীও ‘কেমোমা’কে সব রকম সাহায্য করবেন বলে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন।
রাজারহাটের নিউটাউন এলাকায় গড়ে ওঠা ‘কেমোমা’ হবে আধুনিক শিল্পকলার এক বিশ্বজনীন সংগ্রহশালা। এ ধরনের সংগ্রহশালা শুধু ভারতেই প্রথম নয়, সারা এশিয়াতেও তার তুলনা মিলবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে কুমারী শৈলজা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারও চায়, অতীতের ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কলকাতা দেশের ‘প্রকৃত’ সাংস্কৃতিক রাজধানী হোক। মুখ্যমন্ত্রী সেই লক্ষ্যে কয়েকটি প্রকল্পে সাহায্য চেয়েছেন। ভারত সরকার সেগুলিকে সর্বাধিক সহায়তা দেবে।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রবীন্দ্রনাথের নামে কলকাতায় আন্তর্জাতিক সংস্কৃতিকেন্দ্র গড়ে তোলার পাশাপাশি, জেলায় জেলায় রবীন্দ্র ভবন সংস্কার করতে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে ৬৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান চেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, জেলার রবীন্দ্র ভবনগুলির জীর্ণ দশা। সেগুলি ভাল ভাবে সংস্কার করা হলে জেলার ছেলেমেয়েরা ওই সব ভবনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক চর্চায় সামিল হতে পারবেন। তিনি জানান, রবীন্দ্র ভবনগুলির সংস্কারের ব্যাপারে সবিস্তার পরিকল্পনা কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া, রাজারহাটে হিডকো তৈরি করছে ‘রবীন্দ্র তীর্থ’। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ দাবি রয়েছে। কারণ, রবীন্দ্রনাথ ‘সন অফ দ্য সয়েল’। অথচ, কেন্দ্রীয় সরকার রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের জন্য মধ্যপ্রদেশকে ৪৫ কোটি টাকা দিয়েছে। আর পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে ১০ কোটি টাকা।”
কুমারী শৈলজা জানান, রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষ পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রসঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। |