কখনও বিমানযাত্রীদের বাস, কখনও মালপত্র নিয়ে যাওয়ার ট্রাক্টর। গত কয়েক মাসে বারবারই চলন্ত বিমানের সামনে চলে আসছিল গাড়ি।
শনিবার সকালে রানওয়েতে দৌড় শুরু করার পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ডানার সঙ্গে ধাক্কা লাগল বিমানে ওঠা-নামার সিঁড়ির। উল্টে গেল গাড়ির উপরে বসানো সিঁড়িটি। ডানার ক্ষতি হওয়ায় তখনকার মতো স্থগিত করতে হল উড়ানও। তবে বিমানের গতি কম থাকায় কেউ হতাহত হননি। ঘটনার কারণ খুঁজতে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) তদন্তে নেমেছে।
গতিতে গড়াতে থাকা বিমানের সঙ্গে গাড়ির ধাক্কা লাগলে তার পরিণতি যে ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা জানিয়ে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে গাড়ি চালকদেরও। কিন্তু তাতে যে কাজ হয়নি, গত কিছু দিন ধরেই তা টের পাওয়া যাচ্ছিল। এর আগেও গাড়িতে বসানো সিঁড়ি রানওয়েতে এসে গিয়েছে। রানওয়ে হেঁটে পেরোতেও দেখা গিয়েছে বিমানবন্দরের কর্মীকে। আর, এ দিন অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলেন যাত্রীরা।
এ দিন সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ গুয়াহাটি উদ্দেশে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল এয়ারবাস ৩১৯-এর। বিমানে ছিলেন ৬০ জন যাত্রী, দুই পাইলট ও বিমানসেবিকারা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাইলট জানান, তিনি সিঁড়িটি দেখতে পাননি। নির্দিষ্ট রুট ধরে আলফা ট্যাক্সিওয়েতে উঠতে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকেই প্রধান রানওয়েতে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিমানের চাকা কয়েক পাক ঘোরার পরেই ভয়ানক শব্দে চমকে ওঠেন সকলে। দেখা যায়, বিমানের ডান দিকের পাখার শেষ প্রান্তের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে সিঁড়ির। |
বিমানে ওঠা-নামার এই সিঁড়ি বসানো থাকে একটি গাড়ির উপরে। প্রাথমিক তদন্তের পরে অনুমান করা হচ্ছে, অন্য বিমানে লাগানোর জন্য সিঁড়ি-গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন তার চালক। সেই সময়ে ‘পার্কিং বে’ থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ছাড়তে দেখে তিনি দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু সিঁড়ি-গাড়িটি সম্ভবত কিছুটা বেশিই এগিয়ে গিয়েছিল। সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিমানের ডান দিকের প্রায় ৪০ ফুট লম্বা ডানার শেষ প্রান্ত যে সিঁড়ির মাথায় ছুঁয়ে যাবে, চালক হয়তো তা অনুমান করতে পারেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ধাক্কা লাগার সময়ে সিঁড়ি-গাড়ির চালকের আসন ফাঁকা ছিল। তাই, দুর্ঘটনার আগেই চালক গাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বলে অনুমান। ধাক্কা খেয়ে গাড়ি উল্টে যাওয়ায় সিঁড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটিতে গড়িয়ে পড়ে জ্বালানি। তা থেকে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অফিসারেরা তার উপরে কাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে দেন। বিমানটিকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাত্রীদের নামিয়ে ডানা সারানোর জন্য সেটিকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘হ্যাঙারে’ (বিমানসংস্থার গ্যারেজ)।
সিঁড়িটি বেশ কিছু ক্ষণ উল্টে পড়ে থাকায় কয়েকটি বিমানের উড়ানে দেরি হয়। বাতিল হওয়া বিমানের যাত্রীদের রওনা করানো হয় সন্ধ্যা নাগাদ। ইতিমধ্যে ডিজিসিএ-র অফিসারেরা বিমানের দুই চালক এবং সিঁড়ি-গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। বিমানের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং অন্য তথ্যও চেয়ে পাঠিয়েছে ডিজিসিএ। বিমান সংস্থার তরফেও একটি তদন্ত শুরু হয়েছে। |