ষাট বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের রিষড়া থেকেই কাচের বোতল তৈরির কারখানা নির্মাণ দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল হিন্দুস্তান ন্যাশনাল গ্লাস (এইচএনজি)। এ বার ফের এ রাজ্যে পর্যায়ক্রমে ৩৫০০ কোটি টাকা লগ্নি করে আধুনিক ‘ইন্টিগ্রেটেড’ কাচ ও কাচের বোতল তৈরি কারখানার গড়তে আগ্রহী তারা। সম্প্রতি এই লগ্নির ইচ্ছা প্রকাশ করে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি হবে সংস্থার অন্যতম বৃহৎ কারখানা।
শনিবার শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন এইচএনজি-র প্রেসিডেন্ট অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সংস্থার পদস্থ কর্তারা। পরে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “ওঁরা পানাগড়ে বা অন্যত্র কারখানাটি গড়তে চেয়েছেন। তবে আমরা পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে সেটি গড়তে ওঁদের অনুরোধ করেছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও তাই ইচ্ছে। নিগম সংস্থার প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে।”
সংস্থার এক মুখপাত্র জানান, তাঁরা রাজ্যে লগ্নির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। এ জন্য পানাগড়ে নিগমের শিল্প তালুকে ২০০ একর জমি চেয়েছেন। ভবিষ্যতে শিল্পোৎপাদনের জন্য গ্যাস সরবরাহের কথা মাথায় রেখেই পানাগড় তাঁদের প্রথম পছন্দ।
তিনি জানান, বছর দুয়েকের মধ্যে নতুন কারখানাটি গড়তে অন্তত ১০০০ কোটি টাকা লগ্নির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এরপর পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে দুটি পর্যায়ে লগ্নি হতে পারে আরও ২৫০০ কোটি টাকা। এখন রিষড়ার কারখানায় কাচের বোতল তৈরি করে সংস্থাটি। আর বডোদরার শাখা সংস্থায় ‘ফ্লোট গ্লাস’ তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাবিত নয়া ‘ইন্টিগ্রেটেড’ কারখানায় দু’টিই তৈরি হবে। অন্ধ্রপ্রদেশের নাইডুপেটাতেও ইতিমধ্যেই একটি নয়া কারখানা গড়ার পাশাপাশি নাসিকের কারখানার সম্প্রসারণ করতে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা লগ্নি করছে সংস্থাটি। অন্ধ্রপ্রদেশের কারখানাটিও দু’ধরনের পণ্য তৈরি করবে।
দেশের সংগঠিত কাচ শিল্পের ৫৫% বাজারই দখলে রয়েছে এইচএনজি-র। দেশ জুড়ে ছ’টি কারখানা থেকে ওষুধ, পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্রসাধন শিল্পের প্রয়োজনীয় কাচ ও কাচের বোতল সরবরাহ করে তারা। গত অর্থর্বষে দেড় হাজার কোটিরও বেশি ব্যবসা করা সংস্থাটি ২০১৩-’১৪ সালের মধ্যে মোট উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গেই উৎপাদনের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলনেও উদ্যোগী সংস্থাটি। তারা আগেই জানিয়েছেল, ‘ন্যারো নেক প্রেস অ্যান্ড ব্লো’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে বোতল তৈরি হবে, তার ওজন প্রায় ১৫ শতাংশ কম হবে। ফলে বোতলের দামও কমবে।
বেঙ্গল শ্রীরামের জমি বিতর্ক মেটাতে বৈঠক। হিন্দ মোটর ও বেঙ্গল শ্রীরাম হাইটেক সিটি-র জমি বিতর্কের অবসান ঘটাতে মুখ্য সচিব ও অন্যদের সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠকে বসবেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সমস্যার দ্রুত সমাধানের আর্জি নিয়ে শনিবার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বেঙ্গল শ্রীরামের এমডি দেবাশিস সোম-সহ সংস্থার পদস্থ কর্তারা। পরে পার্থবাবু বলেন, “বেঙ্গল শ্রীরামের কর্তা জানিয়েছেন, হিন্দ মোটরের কিছু জমি কিনেও তাঁরা সেখানে কাজ শুরু করতে পারছেন না। এতে লগ্নিকারী ও ব্যাঙ্ক সমস্যায় পড়েছে।”
তিনি জানান, শীঘ্রই ভূমি সচিব, শিল্প সচিব প্রমুখকে নিয়ে বৈঠক করবেন। তাঁর দাবি, হিন্দ মোটর জমি বিক্রির ক্ষেত্রে পুনর্গঠনের শর্ত ঠিক মতো মানেনি বলে সমস্যা হচ্ছে। তাঁরা দু’পক্ষের কাছেই নথিপত্র চেয়েছেন। উল্লেখ্য, কারখানার পুনরুজ্জীবনের জন্য উত্তরপাড়ার হিন্দুস্তান মোটরস কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়তি ৩১৪ একর জমি বিক্রির অনুমতি পেয়েছিলেন তৎকালীন বাম সরকারের থেকে। কিন্তু, সেই অতিরিক্ত জমি বিক্রি বাবদ পাওনা টাকার পরিমাণ নিয়ে রাজ্যকে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে জমির ক্রেতা বেঙ্গল শ্রীরামের দেওয়া তথ্যের গরমিলে জমির ব্যবহার নিয়ে তদন্ত শুরু করে পূর্বতন রাজ্য সরকার। ফলে সেখানে বেঙ্গল শ্রীরামের আবাসন ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পও আটকে যায়। |