রাজ্যের বিনিয়োগ মানচিত্রে নিঃশব্দে ঢ়ুকে পড়ল টিভিএস মোটর সংস্থা।
শনিবার টিভিএস এবং মহাভারত সংস্থার কর্তাদের উপস্থিতিতে রাজ্য সরকার নতুন প্রকল্পের বিষয়ে ‘নীতিগত’ ভাবে সম্মতি জানিয়েছে। তার ভিত্তিতে ওই দুই সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তৈরি হল নতুন সংস্থা ‘নিউ স্ট্র্যাটেজি’। চেয়ারম্যান হয়েছেন অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়।
টিভিএস-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর এইচ লক্ষ্মণন জানিয়েছেন, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে মাসে ১০০০টি করে মোটরবাইক তৈরি করা হবে। ভবিষ্যতে গোটা পূর্ব ভারতের চাহিদা মেটাবে নতুন সংস্থা।
প্রসূনবাবুর সংস্থা মহাভারত মোটরস ২০০৮ সালে উলুবেড়িয়ায় প্রায় ৬৬ একর জমিতে মোটরবাইক তৈরির কারখানা করেছিল। তাদের মোটরবাইকের নাম ছিল অর্জুন। দু’চাকার গাড়ি তৈরি করতে টিভিএস-কে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করেছিল মহাভারত। উৎপাদন ছিল মাসে ২০০-র মতো।
রাজ্যে পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এ বার মহাভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চলে এসেছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোটরবাইক উৎপাদক সংস্থা টিভিএস। ঠিক হয়েছে, মোট ৬৬ একর জমির মধ্যে ৪৫ একরকে আলাদা (ডি-মার্জড) করে তৈরি হবে নতুন কারখানা। এ দিন রাজ্য সরকারের নীতিগত সম্মতির পর তাতে আইনি সিলমোহর দিতে হাইকোর্ট থেকে জমি-বিচ্ছেদের ‘শংসাপত্র’ নিতে হবে বলে জানিয়েছে টিভিএস। ‘ডি-মার্জড ফি’ বাবদ রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম পাবে আড়াই কোটি টাকা।
এত দিন ওই মোটরবাইক কারখানার একমাত্র মালিক ছিল মহাভারত। নতুন ব্যবস্থায় দুই সংস্থার অংশীদারিত্বের অনুপাত কী হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। কারখানার জন্য জমির পাশাপাশি মোটরবাইক তৈরির পরিকাঠামো ও যন্ত্রাংশ বর্তমানে মহাভারত সংস্থার হাতে রয়েছে বলে প্রসূনবাবুর দাবি। তবে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক মানের যন্ত্রাংশ দরকার। এ জন্য শুরুতে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে টিভিএস। পাঁচ বছরে মোট ৩০০ কোটি টাকা ঢালবে তারা। এ ছাড়া ২৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরিতে নিয়োগ করবে নতুন সংস্থা। প্রসূনবাবু জানান, ভবিষ্যতে এই কারখানার জন্য যাবতীয় বিনিয়োগ করবে টিভিএস।
এ দিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দু’পক্ষই আগে চিঠি দিয়ে নতুন সংস্থা তৈরির কথা বলেছিল। নতুন সংস্থা করে টিভিএস নিজেদের ‘ব্র্যান্ডে’ মোটরবাইক তৈরি করবে। বেশির ভাগ শেয়ার থাকবে টিভিএসের হাতে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এখানে একটা অটো হাব করতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যেই এই কাজ হচ্ছে। পরিবহণ শিল্পে বড় লগ্নি ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। সেই লক্ষ্যে এই উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের দিক থেকে এই বিনিয়োগ যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ণ এবং সময়োচিত।” শিল্পমন্ত্রীর কথায়, “এই পৃথকীকরণের (ডি-মার্জার) জন্য আমরা ৮-১০ দফা শর্ত দিয়েছি। ওই সব শর্ত পূরণের পরে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।”
মহাভারত সংস্থা তৈরির সময় রাজ্যের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন প্রসূনবাবু। এখন সেই বকেয়া ঋণের জরিমানা ছাড় দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু তা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “নিয়মের ব্যতিক্রম করা যাবে না। তা ছাড়া রাজ্যের আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। ঋণের টাকা আগে মিটিয়ে দিতে হবে।” তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও হিমাচলপ্রদেশের পরে এই রাজ্যে কারখানা খুলছে টিভিএস।
টিভিএসের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর বলেন, “আমরা সব শর্ত পূরণ করব। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হল, গোটা পুর্বাঞ্চলের চাহিদা এখান থেকে মেটানো।” মহাভারতের কর্ণধার প্রসূনবাবু বলেন, “ইতিমধ্যে এই কারখানায় জমি, বিল্ডিং ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বেশ কিছু বিনিয়োগ করেছি। টিভিএস ব্র্যান্ডের মোটরবাইক তৈরি হবে। পরে অটোরিক্সা বানানো হতে পারে।” পূর্বাঞ্চলের প্রথম দু’চাকার গাড়ি কারখানা এ রাজ্যে পা রাখায় খুশি প্রসূনবাবু। মাত্র দু’দিন আগে নয়াচরে ত্রিমুখী প্রকল্প তৈরির জন্য তাঁর সংস্থা রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। মূলত তাঁর হাত ধরেই টিভিএস এ রাজ্যে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রসূনবাবু বলেন, “টিভিএস-এর মতো একটি সংস্থা এ রাজ্যে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তাতে আমার একটা ভূমিকা থাকল। এটা ভেবে আমার ভাল লাগছে।” |