|
শীতের হাওয়া লাগুক গায়ে |
|
শীতকাল ত্বকের পরম শত্রু। একটু আগে থেকে যত্ন নিলে
এই ঋতুতেও মসৃণ সজীব ত্বক সম্ভব। জানালেন রূপ
বিশেষজ্ঞা শর্মিলা সিংহ ফ্লোরা |
|
শীতকালের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা আর অতর্কিতে পাকিস্তানের আক্রমণকে সামাল দেওয়া প্রায় একই গোত্রের। ভারতকে যেমন বিভিন্ন মিসাইল তৈরি রাখতে হয় হামলা ঠেকাতে, ঠিক তেমনই আমাদের ত্বককে শীত শুরুর অন্তত তিন মাস আগে থেকে ঠিকঠাক যত্নআত্তি করতে হয়। তবেই শীতকালে ‘সেরার সেরা’ হয়ে ওঠা সম্ভব। মোটামুটি ভাবে অগস্ট মাস থেকে প্রস্তুতি শুরু করতে হয়। অক্টোবরের ৩০ তারিখ থেকে টানের হাওয়া বইতে শুরু হল আর অমনি আমার জৌলুস গেল গেল রবে যত্ন নেওয়া শুরু করলাম এই চটজলদির কোনও সমাধান নেই। শীতকাল একটি এমন ধরনের ঋতু, যেখানে আমরা সারা বছরের তুলনায় বেশি কালো হয়ে যাই। খুবই খসখসে ও শুকনো দেখায়। মনে হয়, বাড়িতেই থাকি, কোথাও বেরোব না। কিন্তু বাড়িতে লুকিয়ে বসে থাকা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। শীতকাল যত এগিয়ে আসে, জল খাওয়া ততই কমতে থাকে। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। শরীরের ময়লা শরীরেই থাকে এবং ত্বক ক্রমশ এলার্জিক হয়ে পড়ে। তখন কোনও উপটান বা ট্রিটমেন্টকিছুই কাজে লাগে না। এই সময় ভিটামিন-ই জাতীয় খাবার খেতে হয়। যাঁদের হাতে সময় কম, তাঁরা ভিটামিন-ই ট্যাবলেট রোজ সকালে খাবেন।
এ বার আসি অগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে কী ভাবে যত্ন নেওয়া উচিত সে বিষয়ে।
|
অগস্ট থেকে অক্টোবর |
মঞ্জিষ্ঠা, চন্দন, অপরাজিতা পাপড়ির গুঁড়ো, বেলগিরি এবং হলুদ, তিল তেল, নারকেল অথবা যে কোনও ভেষজ তেলের সঙ্গে এক সঙ্গে মিশিয়ে সপ্তাহে তিন দিন মাখতে হবে। এটি নিয়মিত ভাবে তিন মাস ব্যবহার করলে শীতকালে সহজেই চকচকে ত্বক নিয়ে গর্ব করা যাবে।
|
নভেম্বর |
ভাল করে তেল মাখতে হবে এবং তার সঙ্গে স্ক্রাবার দিয়ে ঘষে তেলটি তুলে ফেলা অত্যন্ত আবশ্যক। তেল শরীরে লেগে থাকলে ময়লা বসে যায়। উঠতে চায় না। প্রচুর পরিমাণে ফল ও জল খেতে হবে। শীতকাল বলে সানস্ক্রিন ব্যবহার ভুললে চলবে না। কারণ শীতকালে অতিবেগুনি রশ্মি অনেক বেশি শক্তিশালী, ছাতা বাদ দিয়ে পিঠে রোদ লাগিয়ে ঘুরলে দ্রুত ট্যানড হয়ে যাবেন। অগস্ট থেকে অক্টোবর ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে শুতে পারেন, কিন্তু এই সময় হালকা নাইটক্রিম লাগিয়ে শুতে হবে। যাঁদের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, তাঁরা প্রোটিন প্যাকের সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নেবেন। অ্যান্টি-রিংকল-এর জন্য এটা খুব ফলদায়ক।
সন্ধেবেলায় বাড়িতে এসে অ্যালোভেরা যুক্ত ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। অলিভ অয়েল ও আমন্ড বাদামগুঁড়ো দিয়ে মাসাজ করলে ভাল। |
|
প্যাক |
ডিমের কুসুম (যাঁরা নিরামিষভোজী, তাঁদের জন্য দই), এক চামচ বাদাম তেল, এক চামচ ওটমিলএই মিশ্রণটি সপ্তাহে তিন দিন লাগাবেন। হালকা গরম জলে মুখ ধুয়ে ভেষজ নাইটক্রিম, যাঁদের স্বাভাবিক ত্বক, তাঁরা হালকা নাইটক্রিম এবং অ্যান্টি-রিংকল-এর জন্য পুরু নাইটক্রিম ব্যবহার করতে হবে। এই প্যাকটি সকলেই ব্যবহার করতে পারেন।
|
হাত-পা |
শীতকালে হাত-পা ফেটে যাওয়ার সমস্যা সকলের ক্ষেত্রেই খুবই স্বাভাবিক। অফিস থেকে ফিরে নুন গরম জলে দিয়ে ধুয়ে তরল সাবান মিশিয়ে হাত-পা অন্তত দশ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। গোড়ালি পিউমিস স্টোন দিয়ে ঘষুন। হাত ঘষার দরকার নেই, কারণ পা বেশি ফাটে। এর পর বাদাম তেল ও কর্পূর মিশিয়ে হালকা মাসাজ করে ইলাস্টিক ছাড়া হাফ সুতির মোজা পরে শুয়ে পড়ুন। হাতে এই মিশ্রণটি লাগিয়ে তার পর মুছে নেবেন।
|
শীতকালের বিশেষ প্যাক |
তৈলাক্ত এবং সংবেদনশীল ত্বকের জন্য—
|
• এক চামচ মধু, এক চামচ অ্যালকোহল, গোলাপজলে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে দশ মিনিট রাখুন। হালকা গরম জলে ধুয়ে নিন। এর পর অয়েল বেসড ময়শ্চারাইজার লাগাতে হবে।
• এক চামচ মধু, এক চামচ আপেল বাটা, এক চামচ পাতিলেবুর রস গোলাপজল মিশিয়ে, দশ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। হালকা গরম জলে ধুয়ে অয়েল বেসড ময়শ্চারাইজার লাগান।
|
শুষ্ক ত্বকের প্যাক— |
• এক চামচ মুলতানি মাটি, এক চামচ ঈস্ট পাউডার, এক চামচ মধু, দুধের সঙ্গে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে দশ মিনিট রাখুন। হালকা গরম জলে ধুয়ে একটি ক্রিম লাগিয়ে নিন।
• মুলতানি মাটি, একটি ডিমের কুসুম, এক চামচ নারকেল বাটা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে লাগান। দশ মিনিট রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে একটি ক্রিম লাগিয়ে নিন।
• একটু কমলালেবুর রস, ঈস্ট পাউডার, মুলতানি মাটি, পানিফল বাটা, দুধের সঙ্গে মিশিয়ে কুড়ি মিনিট রাখুন। হালকা গরম জলে ধুয়ে একটি ক্রিম লাগিয়ে নিন।
|
বিশেষ টিপস |
• খুব ঘষে ঘষে বার বার মুখ ধোবেন না।
•
দুধ-চা, কফি পান একেবারেই চলবে না।
•
তোয়ালে বা শুকনো কিছু দিয়ে মুখ মোছা
ঠিক নয়।
•
নাইটক্রিম মেখে না শোওয়া একটি অপরাধ।
•
চোখের তলার কাজল তুলে শোবেন। ঠিক মতো পরিষ্কার না হলে বলিরেখা দ্রুত দেখা যায়।
• মনে রাখবেন, প্যাক লাগানো মানেই ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া। সুতরাং মুখ ধুয়ে ক্রিম বা লোশন লাগাতে ভুলবেন না। |
|
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|