মন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবায় ঘাটতির দিকগুলি খতিয়ে দেখতে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরা। শুক্রবার ওই বৈঠকে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বিগত সভায় কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এবং তা কতদূর কার্যকর করা হয়েছে সে ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। জরুরি পরিষেবার দিকগুলি যাতে কোনও ভাবেই উপেক্ষিত না থাকে তা দেখতে বলা হয়েছে। নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু) দ্রুত চালু করা, নতুন কার্ডিওগ্রাফ এবং আলট্রাসোনগ্রাফির যন্ত্র কেনা এবং আরও বেশ কিছু সরঞ্জাম কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে চিকিৎসক, সাফাই কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মী পর্যাপ্ত না-থাকার বিষয়টি। চিকিৎসকের অভাবে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের মেডিসিন এবং অর্থোপেডিক-এর বহির্বিভাগ সপ্তাহে অধিকাংশ দিনই বন্ধ থাকছে। তাতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে অনেক রোগীকে। এ দিনের আলোচনায় ওঠে এই প্রসঙ্গও। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের এক সচিবও। বৃহস্পতিবার গাড়ির ধাক্কায় জখম এক রোগীকে রাস্তা থেকে তুলে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়ে পরিষেবার বেহাল পরিস্থিতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। এ দিন জরুরি কাজে তিনি কলকাতায় থাকলেও তার নির্দেশে দফতরের আধিকারিকরা গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করেন। প্রসূতি বিভাগের সম্প্রসারিত অংশ মাস দেড়েক আগে উদ্বোধন হলেও তা বন্ধ ছিল। এ দিন থেকে তা চালু করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ নভেম্বর থেকে মেডিসিন অবো অর্থোপেডিক বিভাগ সপ্তাহে ৬ দিনের পরিবর্তে মাত্র ২দিন খোলা থাকছে। অন্য দিনগুলিতে ওই দুই বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মিলছে না। সাধারণ বিভাগে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এর আগে একই পরিস্থিতি হয়েছিল শল্য বিভাগে। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের তৎপরতায় এক জন শল্য চিকিৎসক যোগ দেওয়ায় সম্প্রতি সেই সমস্যা কিছুটা মিটলেও নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে মেডিসিন এবং অর্থোপেডিক বিভাগে। এক দিকে রোগীর চাপ অন্য দিকে চিকিৎসকের অভাবে পরিষেবার কাজ ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রণজিৎ ভকত সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “চিকিৎসকের অভাবে ১ নভেম্বর থেকে মেডিসিন এবং অর্থোপেডিকের বহির্বিভাগ সপ্তাহে ২ দিন করে খোলা রাখতে হচ্ছে। বাকি দিনগুলিতে সাধারণ বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে রোগীদের। কয়েকজন চিকিৎসক অবসরও নিতে চলেছেন। সমস্যা কথা এ দিন বৈঠকেও জানানো হয়েছে।” জেলা হাসপাতাল সূত্রে খবর, মেডিসিন বিভাগে ৪ জন চিকিৎসক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২ জন স্বেচ্ছাবসর চেয়ে আবেদন করেন মাস ছয়েকেরও বেশি আগে। দিন ১৫ আগে থেকে এক জন এবং গত ১ নভেম্বর থেকে অপর জন কাজে যোগ না দেওয়ায় ২ জন চিকিৎসককে ওই বিভাগ সামলাতে হচ্ছে। তাদের এক জন বিশেষজ্ঞ, অপরজন জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার (জিডিএমও)। অথচ গড়ে প্রতিদিন ২৫০-এর বেশি রোগী আসে ওই দুটি বিভাগে। তার সঙ্গে রয়েছে অন্তবির্ভাগের দায়িত্ব। এখন তাই কেবল সোমবার এবং বৃহস্পতিবার মেডিসিনের বহির্বিভাগ খোলা থাকছে। দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক জানান, আপাতত ঠিক হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মেডিসিনে ১ এবং অস্থিবিভাগে ১ চিকিৎসক শীঘ্রই যোগ দেবেন। তাই বহির্বিভাগ সোমবার এবং শুক্রবার ২ দিন খোলা থাকছে। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন রয়েছে এমন রোগীদের চিকিৎসা হত মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার। এক জন চিকিৎসকের পক্ষে তা সামাল দেওয়ায় মুশকিল বলে মনে করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। |