নতুন তদন্ত কমিটি
ময়না-তদন্তে শিশুর দেহেও ‘পোড়া দাগ’
জীবাণুনাশকের বদলে ‘অ্যাসিড’ ব্যবহারেই যে প্রসূতির পা পুড়ে গিয়েছিল, সেই সন্দেহ ক্রমে জোরালো হচ্ছে। তবে শুক্রবার সদ্যোজাতের দেহের ময়না-তদন্তের পরে পরিষ্কার, মৃত অবস্থাতেই শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। যদিও তার দেহেও বেশ কিছু জায়গায় ‘রাসায়নিকে দগ্ধ’ হওয়ার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।
মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ‘অ্যাসিড কাণ্ডে’ দগ্ধ শিখা বিবির পরিবারের অভিযোগের জেরে বৃহস্পতিবারই কবর থেকে তোলা হয়েছিল সদ্যোজাতের দেহ। তিন চিকিৎসকের যে দল ময়না-তদন্ত করেছেন, তার অন্যতম শিশু বিশেষজ্ঞ অমিয় ঘটক সন্ধ্যায় জানান, শিশুটির শরীরে বেশ কিছু জায়গায় পোড়া দাগ রয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র জানান, ঘটনার তদন্তের জন্য কলকাতার স্বাস্থ্য ভবন থেকে দুই সদস্যের নতুন কমিটি পাঠানো হচ্ছে।
অমিয়বাবুর কথায়, “ওই মহিলা মৃত সন্তান প্রসব করেছিলেন। কারণ ময়না-তদন্তে দেখা গিয়েছে, শিশুটির ফুসফুস কিংবা যকৃৎ একেবারেই কাজ করেনি। তবে তার চোখের চারপাশে, গলায়, মুখে ও বেশ কিছু জায়গায় রাসায়নিকে পোড়ার দাগ রয়েছে। সম্ভবত প্রসবের পরে সাফসুতরো করতে গিয়েই ওই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছিল।” ময়না-তদন্ত করা অন্য এক চিকিৎসকও ওই ‘পোড়া দাগ’ লক্ষ করেছেন বলে জানান। সেই উল্লেখ তাঁরা ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও করছেন বলে ওই দুই চিকিৎসক দাবি করেছেন।
ময়না-তদন্তের পরে ওই রিপোর্ট যাওয়ার কথা পুলিশের কাছে। মুর্শিদাবাদ থানার আইসি ইন্দ্রজিৎ কুণ্ডু অবশ্য জানান, রাত পর্যন্ত তাঁর কাছে কোনও রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্টের কথা শুনেছেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক শাঁওনি সিংহরায়ও। তাঁর প্রশ্ন, “তর্কের খাতিরে না হয় মেনে নিলাম, মহিলা মৃত শিশু প্রসব করেছিলেন। তা বলে, অ্যাসিড দিয়ে শিশুটিকে পরিষ্কার করতে হবে, এতটাই অমানবিক আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা?”
হাসপাতালের গড়া তদন্ত কমিটির প্রতি তাঁর যে আস্থা নেই, এ দিন বিধানসভায় স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির কাছে তা-ও তিনি জানান কংগ্রেস বিধায়ক। গত বুধবার গড়া তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ওই তদন্ত কমিটির প্রতি যে স্বাস্থ্য ভবনেরও তেমন ‘আস্থা’ নেই, এ দিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিবও। তিনি জানান, স্থানীয় স্তরে গড়া ওই কমিটির বদলে এ বার স্বাস্থ্য ভবন থেকে দুই সদস্যের কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত তদন্ত শেষ করবে।
সেই সঙ্গে, সরকারি হাসপাতালে আয়াদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন স্বীকার করে নেন, এ ব্যাপারে তাঁরা ‘নিরুপায়’। তিনি বলেন, “হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাব এতটাই যে আয়াদের ছাড়া চলবে না। নার্সের সংখ্যাও কম। এই পরিস্থিতিতে রোগীর বাড়ির লোকজনেরা রোগীর সঙ্গে না থাকলে আয়াদের উপরে ভরসা করতেই হয়।” তবে নিয়মের জটিলতা কাটিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এ দিকে, লালবাগ হাসপাতালের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই কী করে শ্যামলী কর্মকার নামে এক নার্সকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন নার্সদের একাংশ। শ্যামলীদেবীকে সাসপেন্ডের প্রতিবাদে এ দিন তাঁরা হাসপাতাল সুপার শাশ্বতী নাগের কাছে স্মারকলিপিও দেন। শ্যামলীদেবী নিজে অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর স্বামী বিদ্যুৎ সিংহের প্রশ্ন, “ওই ঘটনায় জড়িত আয়া দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তার পরেও আমার স্ত্রীকে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত কেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.