জঙ্গলমহলে মাওবাদী-ডেরার সন্ধানে নতুন করে যে চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়েছে, তাতে বড়সড় সাফল্য পেল যৌথ বাহিনী। ধরা পড়লেন মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ জনগণের কমিটির মুখপাত্র জয়দেব মাহাতো। সঙ্গে সন্দেহভাজন আরও দু’জন।
শুক্রবার ভোরে ঝাড়গ্রাম থানার চাকুয়া গ্রামের লাগোয়া খুঁটাডিহি থেকে জয়দেব-সহ ৩ জনকে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার গৌরব শর্মার দাবি, “রাষ্ট্রদ্রোহ, খুন, অপহরণ ও হামলা-নাশকতার অন্তত ১৩টি মামলায় প্রধান অভিযুক্ত এই জয়দেব। জনগণের কমিটির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকলেও আদতে মাওবাদী স্কোয়াডেরই সদস্য। ছত্তীসগঢ়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণও নিয়েছে বলে আমরা জেনেছি।”
|
জয়দেব মাহাতো।
ফাইল চিত্র। |
গত দেড় বছরে একাধিক বার এই কমিটি-নেতাকে ধরতে অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। কিন্তু প্রতি বারই বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে ‘গোপন ডেরা’ থেকে পালিয়েছেন জয়দেব। তবে শুক্রবার ভোরে চাকুয়া গ্রামের ‘ডেরা’ থেকে কার্যত ঘুম ভাঙিয়েই জয়দেবকে গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, জঙ্গলে ঘেরা চাকুয়া অঞ্চলের খুঁটাডিহির একটি বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন জয়দেব। বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে দিনের আলো ফোটার আগেই চাকুয়া ও খুঁটাডিহি গ্রাম ঘিরে ফেলে যৌথ বাহিনী। বাহিনী পৌঁছেছে বুঝে শেষ মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে অন্য একটি বাড়িতে আত্মগোপনের চেষ্টা করেছিলেন এই কমিটি-নেতা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। জয়দেবকে আশ্রয় দেওয়া ও সশস্ত্র মাওবাদীদের সাহায্য করার অভিযোগে চাকুয়া গ্রামেরই অপূর্ব ভক্তা ও শান্তনু মাহাতোকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। শান্তনুর একটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, মাওবাদীদের যাতায়াতের জন্য মাঝেমধ্যেই ব্যবহৃত হত গাড়িটি। আজ, শনিবার জয়দেবদের হাজির করা হবে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে। বছর বত্রিশের জয়দেব মাহাতোর বাড়ি ঝাড়গ্রামেরই দহতমূল গ্রামে। ক্লাস সেভেন অবধি পড়াশোনা করা এই যুবক ২০০২ সালে গোয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তা রক্ষীর কাজে যোগ দেন। বছর পাঁচেক পর গ্রামে ফিরে আসেন। কিছু দিন হুল-ঝাড়খণ্ড ক্রান্তি দল নামে একটি সংগঠন করতেন। ২০০৮ সালে লালগড় আন্দোলন শুরুর পরে জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। গত বছর অক্টোবরে জনগণের কমিটির মুখপাত্র মনোজ মাহাতো প্রথম বার গ্রেফতার হওয়ার পর কমিটির মুখপাত্রের দায়িত্ব পান জয়দেব। খুঁটাডিহি থেকে ৩ জনকে ছাড়াও বেআইনি অস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগে জামবনির জুয়াশোল গ্রাম থেকে সনাতন হাঁসদা নামে আরও এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর বাড়ি বিনপুরের রানাবাঁধ গ্রামে। জুয়াশোলে দাদার বাড়িতে এসেছিলেন। সন্দেহজনক আচরণের কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রামবাসীরাই সনাতনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশের দাবি, ধৃতের কাছ থেকে তিনটি থ্রি-নট-থ্রি কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে। শুক্রবার তাঁকে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করা হলে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। পুলিশ, যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে ছাত্র-নিগ্রহ, ধরপাকড়ের অভিযোগে শুক্রবার ফের জঙ্গলমহলে বন্ধ ডেকেছিল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস্ ফেডারেশন (জেএসএফ) ও জনগণের কমিটির ঘনিষ্ঠ সংগঠন ‘ছাত্রসমাজ’। যার সামান্যই প্রভাব পড়েছিল ঝাড়গ্রাম মহকুমায়। ঝাড়গ্রাম শহরে কিছু দোকান বন্ধ ছিল। কয়েকটি এলাকায় বাস-ট্রেকার চলাচল ব্যাহত হয়। বন্ধ-বিরোধিতায় ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আবার তির, ধনুক, টাঙি নিয়ে মোটরবাইক-মিছিল করে ‘জনজাগরণ মঞ্চ’। সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম শহরেও কয়েকশো মোটরবাইক নিয়ে মিছিল করেন মঞ্চের লোকজন। |