দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
উদ্যোগ
নবনির্মাণ
ড়িয়ার লক্ষ্মীনারায়ণ পার্কে তৈরি হতে চলেছে একটি মুক্তমঞ্চ। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অর্থও বরাদ্দ হয়েছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গড়িয়ার লক্ষ্মীনারায়ণ পার্কে প্রস্তাবিত মুক্তমঞ্চ গড়ার জন্য সাংসদ তহবিল থেকে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা অনুমোদনের কথা জানিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে কলকাতার পুর-কমিশনারের দফতরে চিঠি এসে পৌঁছেছে। পুর-কমিশনার অর্ণব রায় এই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “এ বার প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য আনুমানিক ব্যয় নির্ধারণ করে জেলাশাসককে জানাতে হবে।”
১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান এবং ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে মেয়র এবং উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কয়েক জন বাস্তুকার, বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি।”
উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “ওখানে একটি মুক্তমঞ্চ গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পুরসভা তা খতিয়ে দেখছে।” বিশিষ্ট নাট্যকার ও নির্দেশক বিভাস চক্রবর্তীর কথায়: “আমি পার্কটি দেখেছি। মুক্তমঞ্চের গঠন নিয়ে সংশ্লিষ্ট পুরপ্রতিনিধিকে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। তাঁকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলতে বলেছি।”
যদিও এলাকায় ঘুরে জানা গেল, বাসিন্দাদের একাংশের আপত্তি রয়েছে প্রস্তাবিত এই প্রকল্প নিয়ে। তাঁদের আপত্তির কারণ, এই পার্কে মুক্তমঞ্চ বা ‘কমিউনিটি হল’ তৈরি হলে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হবে। যখন-তখন তারস্বরে মাইক বাজবে। পার্কে এখন যে প্রতি বছর দুর্গা ও কালীপুজো হয় তা করা যাবে না। প্রতি দিন বিকেলে পাড়ার বাচ্চারা যে খেলে তা বন্ধ হয়ে যাবে। রোজ সকাল-সন্ধ্যায় পাড়ার বয়স্করা পার্কে বসে আড্ডা মারেন ও ঘোরেন। তা আর হবে না। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় কোনও সবুজ মাঠ থাকবে না। অঞ্চলের বাসিন্দা জয়দীপ রায় বলেন, ‘‘এই পার্কে কোনও হল নির্মাণ হলে এলাকার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
পার্কের মধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পকে ঘিরে দ্বিমত তৈরি হয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণ কলোনি কমিটির অভ্যন্তরেও। কমিটির সহ-সভাপতি, তৃণমূল নেতা চিত্ত দত্ত বলেন, ‘‘এই পার্কে মুক্তমঞ্চ নির্মাণের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে কলোনির পরিবেশটাই বদলে যাবে।” এ দিকে কলোনি কমিটির সম্পাদক, সিপিএমের রমেন (মণি) দত্ত বলেন, “পার্কে কমিউনিটি হল বা মুক্তমঞ্চ, কোনওটাই করা যাবে না। গাছ লাগিয়ে, আরও দু’একটা খেলার সরঞ্জাম দিয়ে পার্কটি আরও উন্নত করা যেতে পারে। আমরা কলোনির বাসিন্দাদের নিয়ে সভাও করেছি এই পার্কে। বেশির ভাগ বাসিন্দা আমাদের পক্ষেই কথা বলেছেন।”
এই মাঠেই বিকল্প পার্ক হওয়ার কথা প্রস্তাবিত মুক্তমঞ্চের নকশা
যদিও পুর প্রতিনিধি অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়: “ওখানে কমিউনিটি হল নয়, মুক্তমঞ্চ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। খেলা, ঘোরা, আড্ডা, পুজো এবং শব্দ সংক্রান্ত সমস্যার কথা এলাকার বাসিন্দারা আমাকে জানিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের সময় আমি পরিষ্কার ভাবে বলেছি যে মুক্তমঞ্চের একাংশে দুর্গা ও কালীপুজোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।” তাঁর কথায়: “প্রস্তাবিত মুক্তমঞ্চটি এমন ভাবে নির্মাণ করা হবে যে তার কোনও শব্দ বাইরে আসবে না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনও অনুষ্ঠানের জন্য তা ভাড়া দেওয়া হবে না। এমনকী, যাঁরা এই মুক্তমঞ্চ ব্যবহার করবেন তাঁদের গাড়ি রাখার জন্য বাইরে আলাদা জায়গা করে দেওয়া হবে। বাচ্চাদের খেলা, বয়স্কদের সকাল-বিকেল ঘোরা এবং আড্ডা মারার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে কলোনির সি ব্লকে হরিসভা সংলগ্ন মাঠে।”
বাসিন্দাদের একাংশের আপত্তি সত্ত্বেও মুক্তমঞ্চ গড়ার জন্য লক্ষ্মীনারায়ণ পার্ককে কেন বাছা হল? এই ওয়ার্ডে তো আরও অনেক জায়গা ছিল? অমিতাভবাবু বলেন, “এলাকার প্রধান দুই রাস্তা এনএসসি বসু রোড এবং রাজা এসসি মল্লিক রোড দিয়ে সহজেই এই পার্কে যাতায়াত করা যায়। অন্য জায়গাগুলির ক্ষেত্রে এই সুবিধে নেই।”

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.