|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা |
পুর-উদ্যোগ |
স্বপ্নের বাগানে |
স্বপন দাস |
টালি বসানো ঝকঝকে পথ দিয়ে ঢুকতেই লেক আর জলের উপর বিশাল ফোয়ারা। কখনও কানে আসছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর, কখনও নজরুলগীতির। রকমারি ফুলগাছের চার পাশ দিয়ে প্রাতর্ভ্রমণ বা সান্ধ্যভ্রমণের জায়গা। জিরিয়ে নেওয়ার জন্য আছে ছোট্ট কটেজও।
এ দৃশ্য বেহালার পর্ণশ্রী বিবেকানন্দ কাননের। পর্ণশ্রী বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া পূতিগন্ধময় পরিবেশ বদলে গিয়ে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এই পার্ক। গত ১২ জানুয়ারি তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পার্কটির উদ্বোধন করেন।
পার্ক তৈরি হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। এমনকী, বিদেশে কাটিয়ে আসা বাসিন্দা অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলাদ্রিশেখর বসুরাও খুশি। এই পার্কে আকুপ্রেশার পাথর দিয়ে তৈরি রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটতে
আসেন তাঁরা। জানালেন, অস্ট্রেলিয়া বা জার্মানির প্রথম সারির পার্কগুলির সঙ্গেও তুলনা করা যায় এর।
পর্ণশ্রী-র সাড়ে ২৬ হাজার বর্গমিটার এলাকা ১৯৮২-তে চলে আসে কলকাতা পুর এলাকায়। যার মধ্যে ছিল ২০ হাজার বর্গমিটার পর্ণশ্রী লেক। ওই লেকের চার পাশ ঘিরে সাড়ে ছহাজার বর্গমিটারে তৈরি পার্কটির কাজ শুরু হয় ২০০৭-এ। |
|
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এলাকাটি জন-শৌচাগার হয়ে উঠেছিল। ওই পরিবেশ আমূল বদলে বর্তমান চেহারায় আনা গিয়েছে আমাদের পুরসভা, সাংসদ, বিধানসভার সদস্যদের সহযোগিতার ফলেই। তাঁরা নিজস্ব এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে এই পার্কের জন্য অর্থ সাহায্য করছেন। এ ছাড়া এতটা এগনো সম্ভব হত না।”
বড়দের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও এই পার্কে রয়েছে নানা খেলার সরঞ্জাম। যেমন রক অ্যান্ড রোল, দোলনা, দড়ির মায়াজাল, ব্যালান্সিং বিম ইত্যাদি। রয়েছে রংবেরঙের ম্যাকাওয়ের মডেল। গানের সঙ্গে
থাকবে শিল্পীর নামের তালিকাও। দু’-তিন দিন পর পর তালিকা বদলানো হবে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পার্কে লেকের উপর থাকা ফোয়ারাটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা।
পার্কটি সাঁতারুদের জন্যও খুব আকর্ষণীয়। এই পর্ণশ্রী লেকে সাঁতার শেখার একটি ক্লাব রয়েছে। অনুমতি নিলেই সাঁতারুরা ব্যবহার করতে পারবেন এই লেক। তাঁদের জন্য রয়েছে একটি ড্রেসিং রুমও। |
|
তবে পার্কটিতে কোনও শৌচাগার নেই। পার্কের বাইরে বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি শৌচাগার থাকলেও তা খুবই অপরিচ্ছন্ন। ইউনিক পার্কের বাসিন্দা প্রবীর দত্ত বললেন, “পার্ক লাগোয়া শৌচাগারটি সুন্দর করে গড়ে তুললে খুব ভাল হয়।” সরশুনা বাসুদেবপুরের বাসিন্দা শুক্লা ভট্টাচার্যের কথায়: “পার্কটি সম্পর্কে শুনেছিলাম। এত সুন্দর পার্ক দেখে অবাক হচ্ছি। তবে কেউ কেউ যে পুকুরের জলে নোংরা ফেলছেন, তাতে একটু খারাপ লাগছে। তাঁদের সচেতন করলে ভাল হয়।”
পুরসভা সূত্রে খবর, এই পার্কে বর্তমানে থাকা স্বামী বিবেকানন্দের আবক্ষ মূর্তিটি পরিবর্তন করে একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসানোর চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ১২ জানুয়ারি, স্বামীজির জন্মদিনে এই পূর্ণাবয়ব মূর্তিটির আবরণ উন্মোচন করা হবে। ভাস্কর বিমল কুণ্ডুর তত্ত্বাবধানে পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি নির্মাণ করছেন ভাস্কর অসীম পাল। মেয়র বলেন, “এখনও অনেক কাজ বাকি। সেগুলি ধীরে ধীরে শেষ করা হবে।” কাজ চলছে ফোয়ারা দেখার জন্য দর্শকাসন তৈরির, পানীয় জলের ব্যবস্থারও। এ সব মিলিয়েই তৈরি হচ্ছে ‘পর্ণশ্রী বিবেকানন্দ কানন’। বছরের শুরুতে উদ্বোধন হলেও রোজই পার্কটি সেজে উঠছে নতুন নতুন আকর্ষণ নিয়ে।
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|