বহুবার নেতা-মন্ত্রীরা প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও শিলিগুড়ির গা ঘেঁষে থাকা ডনবস্কো স্কুল লাগোয়া এলাকা থেকে ডাম্পিং গ্রাউন্ড না-সরানোয় ক্রমশ দূষিত হচ্ছে এলাকা। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বাসিন্দারা। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগোয়া ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। কারণ ওই এলাকায় যাতায়াত করতে গেলেই কোথাও চোখে পড়বে মলমূত্রের স্তূপ। কোথাও নার্সিংহোম, হাসপাতালের রক্ত মাখা কাপড়, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, স্যলাইনের বোতলের পাহাড়। গরু, ছাগলের চামড়া, প্লাস্টিক, পচা সবজি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চারদিকে। চয়নপাড়ার ইস্টার্ন বাইপাস রোডে গেলেও একই দৃশ্য চোখে পড়বে। আশেপাশের চয়নপাড়া, বৈকুন্ঠপল্লি, জ্যৌতিনগর, খোলাচাঁদ ফাপড়ির বাসিন্দারাও অতিষ্ঠ। ওই এলাকায় গেলেই দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে! কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই ছেঁকে ধরে রাশি রাশি মাছি। বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন কয়েক ট্রাক নোংরা ফেলা হয় ভাগাড়ে। অথচ সেগুলি নষ্ট করে দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা সেখানে নেই। কাক-চিলের ঠোঁটে করে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। |
অনেকের বাড়ির উঠোনে, ঘরের চালে এমনকী টিউবওয়েলের পাশে মাংসের টুকরো, প্লাস্টিকের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা। দুর্গন্ধে এলাকার মানুষের মধ্যে পেটের রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েও বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ। পুরসভার অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সেরকম হেলদোল নিয়ে। কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের মেয়র বিষয়টি নিয়ে শুধু আশ্বাসের কথা শোনান। কিন্তু কবে ওই এলাকার মানুষ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও মতামত দিতে পারেননি। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা মেটাতে চেষ্টা হচ্ছে। আবর্জনা পূণর্ব্যবহার করে যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শীঘ্রই আসবেন।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের চয়নপাড়ার প্রায় ২৮ একর জমিতে ডাম্পিং গ্রাউন্ড রয়েছে। যে সময় তা তৈরি করা হয়েছিল তখন ওই এলাকা ছিল প্রায় জনশূন্য। ধীরে ধীরে শিলিগুড়ি শহরের আয়তন বেড়ে যাওয়ায় ভাগাঢ়ে আশেপাশের অঞ্চলে বসতি গড়ে উঠে। বর্তমানে ওই এলাকার পাশে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। ৯টি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং বেশ কয়েকটি বাংলা মাধ্যমের স্কুল গড়ে উঠেছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশ পাশের রাস্তা ধরেই যাতায়াত করতে হয়। স্কুলের গাড়িগুলিও ওই রাস্তাতেই যাতায়াত করে। ইস্টার্ন বাইপাসের মতো গুরুত্বপূর্ণন একটি রাস্তার পাশে ওই জঞ্জালের স্তূপের কারণে এলাকায় দূষণ মারাত্মক আকার নিয়েছে। বৈকুন্ঠপল্লির বাসিন্দা পরিতোষ রায়, পরিমল রায়, কিরণ রায়রা বলেন, “গোটা এলাকা দূষিত। বাড়িতে মশা, মাছিতে ভরে গিয়েছে। নিশ্চিন্তে খেতে পারি না। ভালভাবে নিশ্বাস নিতে পারি না। দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে আসে। বার বার পুরসভায় বিষয়টি জানানোর পরেও কোনও লাভ হয়নি।” পুরসভা সূত্রের খবর, বাম জঞ্জাল ফেলার জন্য পুঁটিমারিতে প্রায় ১৮ একর জমি কিনে রেখেছে পুরসভা। কিন্তু পুঁটিমারির দূরত্ব বেশি হওয়ায় এবং সেখানকার বাসিন্দাদের বাধায় আপাতত সে প্রকল্প বাতি করা হয়েছে। পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেন, “জঞ্জাল ফেলার ওই জায়গায় পাঁচিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুরসভার বোর্ড মিটিঙে তা পাশ হয়েছে। ৯১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া আবর্জনা পুণর্ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প নিয়ে দুটি সংস্থার সঙ্গে কথা হচ্ছে। খুব শীঘ্র সমস্যা মিটবে বলে আশা করছি।”
|