|
|
|
|
আজ দশমী, বিষাদের, সুর বাজছে চন্দননগরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দননগর |
আজ, মহাদশমী।
সকাল থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে মণ্ডপ খোলার তোড়জোড়। মহিলারা তৈরি হবেন দেবীবরণে। বিদায় জানাতে হবে মা জগদ্ধাত্রীকে। তার পর আবার এক বছরের অপেক্ষা। তাই নবমী থেকেই বিষাদের সুর বাজছে চন্দননগরের আকাশ-বাতাসে।
জি টি রোড, স্টেশন রোডের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লরিগুলিতে নবমীতে সারাদিনই আলো সাজাতে ব্যস্ত ছিলেন আলোক-শিল্পীরা। তার মধ্যে দিয়েই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মণ্ডপে ঘুরে বেড়ালেন দর্শনার্থীরা। আর এক বার দেখে নেওয়া, কোনও মণ্ডপ বাদ পড়ে গেল না তো!
এ দিন বহু পুজো কমিটি বিশেষ ভোগের ব্যবস্থা করেছিল। দুপুর হতেই সেই ভোগ নেওয়ার লম্বা লাইন দেখা গেল বিভিন্ন পুজো প্রাঙ্গণে। প্রতিটি মণ্ডপেই এ দিন বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা হয়েছিল। তাই মণ্ডপগুলিতে ভিড়ও ছিল বেশ। তবে, সবচেয়ে বেশি ভিড় চোখে পড়েছে চাউলপট্টি এবং তেঁতুলতলার পুজোয়।
সকলেই বলেন, চাউলপট্টির পুজোই এ শহরের সবচেয়ে পুরনো পুজো। তবে তা কবে চালু হয়েছে, বলতে পারেননি উদ্যোক্তারা। তাঁরা জানান, কথিত আছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বাণিজ্য করে ফেরার পথে এই অঞ্চলে এসেছিলেন। গঙ্গার ধারে তাঁর বজরা থামে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি প্রথম দেবী জগদ্ধাত্রীর ঘটপুজো শুরু করেন। এর পরে কৃষ্ণনগরে মূর্তিপুজো হয়। পরে চাউলপট্টিতেও শুরু হয় মূর্তিপুজো।
স্থায়ী দালানে এখানে পুজো হয়। একই পুরোহিত বংশের সদস্যেরা পুজো করেন। একই নিয়মে প্রতিমাও তৈরি করেন একই বংশের শিল্পীরা। নবমীতে অগুন্তি মানুষ আসেন পুজো দিতে। চারপাশে যেন মেলা বসে যায়। বলি, আরতি, পুষ্পাঞ্জলি সবই হয় নিয়ম মতো। চতুর্থীর দিন থেকে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। তবে, এই চার দিন ছাড়াও বছরভর এখানে দেবীর নিত্যপুজো হয়। উদ্যোক্তারা জানান, লরিতে নয়, পুরনো প্রথা মেনে কাঁধে করে গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। নাটমন্দির থেকে এই প্রতিমা বের না হলে, শহরের কোনও মণ্ডপ থেকেই প্রতিমা নিরঞ্জনে জন্য বের হয় না। কেননা, সব পুজো উদ্যোক্তাদের কাছেই চাউলপট্টির প্রতিমা ‘আদি মা’।
জি টি রোডের ধারে তেঁতুলতলা সর্বজনীনের পুজো এ বার ২১৯ বছরে পড়ল। যা শহরের অন্যতম প্রাচীন পুজো। উদ্যোক্তারা জানান, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম শূর এখানে পুজোর প্রচলন করেন। প্রথম দিকে এই পুজো হত গৌরহাটি অঞ্চলে। পরে ট্রাস্ট্রি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে দেবীর নিজস্ব দালান তৈরি হয় জি টি রোডের ধারে। তবে এখানে ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত নারায়ণ পুজো হয়। নবমীতে হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। যা দেখার জন্য প্রতি বছরের মতো এ বারও অষ্টমীর বিকাল থেকে লাইন পড়ে যায়। আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে মন্দিরের দু’পাশে জি টি রোডে ছাউনি খাটানো হয়েছে এ বারও। দেখা গেল, কেউ দণ্ডী কাটছেন, কেউ মানত করছেন। কেউ আবার মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে বলে দেবীকে অলঙ্কার উৎসর্গ করছেন।
হুগলি জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ, দশমীতে মোট ৬৪টি পুজো কমিটি শোভাযাত্রায় যোগ দিচ্ছে। তাতে ২৪৫টি ট্রাক থাকবে। জ্যোতির মোড় থেকে ঠিক সাড়ে ৫টায় শোভাযাত্রা শুরু হবে। থাকছেন ১৬০০ পুলিশকর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, যে সব পুজো কমিটি শোভাযাত্রায় যোগ দেবে না, তাদের প্রতিমা বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে নিরঞ্জন করতে হবে। এসডিপিও তথাগত বসু জানান, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। |
|
|
|
|
|