নাগা জঙ্গিদের কাছ থেকে অস্ত্র যাচ্ছিল বিহারে। তবে তা মাওবাদীদের জন্য, না কী দুষ্কৃতীদের জন্য, তা এখনও জানা যায়নি। গত কাল ডিমাপুর থেকে অস্ত্র নিয়ে আসার পথে গুয়াহাটি স্টেশনে ধরা পড়েন রেলওয়ে প্রোটেকশন স্পেশ্যাল ফোর্সের এক ইনস্পেক্টর, কুলদীপ সিংহ সিধু। তাঁর সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল ও প্রচুর কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আরপিএফ, রাতে কুলদীপকে জিআরপির হাতে তুলে দেয়। জিআরপি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে জানতে পেরেছে, কলকাতা নয়, কুলদীপ নিউ জলপাইগুড়ি যাচ্ছিলেন। তিনি বেলগাছিয়ায় কর্মরত। অস্ত্রগুলি কিষাণগঞ্জ স্টেশনে নামাবার কথা ছিল।
কুলদীপের দাবি, তিনি মূল অস্ত্র পাচারকারী নন। তাঁকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে বিহারে অস্ত্র পাঠাচ্ছিল এনএসসিএন (আইএম)। জেরায় জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাস অবধি, সাত মাস ডিমাপুরের ধনসিরিতে কর্মরত ছিলেন তিনি। তখনই আই-এম গোষ্ঠীর সদস্য, জনৈক জেম্স-এর সঙ্গে তাঁর আলাপ। জেম্স-এর ডাকেই তিনি ডিমাপুর জঙ্গি শিবিরে গিয়েছিলেন। কুলদীপের দাবি, ফেরার পথে জেমস একটি বাক্স-সহ সংগঠনের এক সদস্যকে তাঁর সঙ্গে ট্রেনে চাপায়। বলা হয়, ওই যুবক কিষাণগঞ্জে নেমে যাবে। কুলদীপ সঙ্গে থাকলে ‘অনর্থক তল্লাশি’ থেকে রেহাই পাবে সে। গুয়াহাটি স্টেশনে নেমে ওই নাগা যুবক টিকিট কাটতে যায়। তখনই বাক্স-সহ ধরা পড়েন কুলদীপ।
পুলিশের সন্দেহ, দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে চম্পট দেয় ওই নাগা যুবক। তবে কুলদীপ ঠিক বলছেন কী না তা জানতে, অন্য সূত্রেও তাঁর বক্তব্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। অস্ত্রগুলি কাদের কাছে পাঠানো হচ্ছিল তা ও এখনও নিশ্চিত নয়।
৭ অক্টোবর, স্পেশ্যাল ফোর্সেরই আরও এক কনস্টেবল, বেআইনি পিস্তল নিয়ে কলকাতা যাওয়ার পথে ধরা পড়েন। তিনিও নাগাল্যান্ড থেকেই পিস্তল যোগাড় করেছিলেন। বিহার ও কলকাতায় কাদের হাতে নাগাল্যান্ডের অস্ত্র পৌঁছচ্ছে, তা জানতে তিন রাজ্যের পুলিশকেই সতর্ক করা হয়েছে। গত কাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমও মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও ডিজি শঙ্কর বরুয়ার সঙ্গে অসমে মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আলোচনা করেন। কেন্দ্রের ধারণা: অসম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড মিলিয়ে নিজেদের ঘাঁটি মজবুত করছে মাওবাদীরা। এই এলাকায় পুলিশ বা সেনাবাহিনী হানা দিলেও, চট করে জঙ্গলের পথে অন্য রাজ্য, এমনকী মায়ানমারেও পালানোর সুযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে সংঘর্ষবিরতিতে থাকা জঙ্গি সংগঠনের আশ্রয় মেলাও মাওবাদীদের বড় সুবিধা।
সংঘর্ষবিরতির নিয়মানুযায়ী, নাগা জঙ্গিদের সরকার স্বীকৃত শিবিরে হানা দিতে বা তল্লাশি চালাতে পারে না পুলিশ বা সেনা। নাগা জঙ্গিরাও মায়ানমার হয়ে বিদেশি অস্ত্র আনছে। পুলিশ ও সেনা গোয়েন্দাদের মতে, কার্যত পূর্ব ভারতে অস্ত্রের খুচরো-পাইকারি বিক্রেতা হয়ে উঠেছে এনএসসিএন। এই নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি এনএসসিএন (আইএম) নেতারা। তাঁদের তথ্যমন্ত্রী এ জেড জামি ফোনে বলেন, “কে কোথায় আমাদের নামে কী বলেছে, তা বিশদে না জেনে মন্তব্য করব না। আমরা মোটেই মাওবাদীদের অস্ত্র পাঠাইনি।” |