মার্সিডিজ বেন্জটি ব্রিজের নীচে দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সন্দেহ হয়েছিল টহলদার জিপের পুলিশকর্মীদের। গাড়িটির কাছে গিয়েই দেখা গেল, সেটির কাচ তোলা। ভিতরে আলো জ্বলছে। চালকের আসনে এক যুবক, তার বাঁ পাশে আর এক জন বসে রয়েছেন। পিছনের আসনে বসে আর এক জন তরুণ। তিন জনের চোখ-মুখেই আতঙ্ক। একে-একে তাঁরা নামার পরে জানা গেল, কয়েক মিনিট আগে একটি মোটরসাইকেলে চেপে দু’জন তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ও গুলি ছুড়ে পালিয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটেছে নারকেলডাঙা থানার সাহেববাগান রেল-আবাসন লাগোয়া ক্যানাল ইস্ট রোডে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত অবশ্য এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গাড়িটি অঙ্কিত জয়সোয়াল নামে ২২ বছরের এক তরুণের। ওই রাতে গাড়ির পিছনের আসনে ছিলেন তিনিই। সেক্টর ফাইভে নির্মাণ সংস্থা রয়েছে অঙ্কিতের। সেখান থেকেই আমহার্স্ট স্ট্রিটের বলাই সিংহী লেনের বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। চালকের পাশে ছিলেন তাঁর দেহরক্ষী। ক্যানাল ইস্ট রোডে ঢুকে কিছুটা যেতেই চালক দেখেন, উল্টো দিক থেকে একটি মোটরসাইকেল আসছে। তাতে বসে দু’জন। গাড়ির কাছাকাছি এসে আচমকাই বোমা ছোড়ে মোটরসাইকেলের এক আরোহী। এর পরে একটি গুলিও ছোড়ে তারা। হাত কেঁপে যায় চালকের। ডান দিকে বেঁকে যায় গাড়ি। এর কিছু ক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রিজার্ভ ফোর্সের জিপ। জিপ থেকে নেমে ইনস্পেক্টর সৌগত চট্টোপাধ্যায় কয়েক বার জানলায় টোকা দেওয়ার পরে নামেন অঙ্কিতেরা। তাঁরা কেউ অবশ্য আহত হননি। এর পরে লালবাজার কন্ট্রোল রুমে খবর দেন সৌগতবাবু।
ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে যায় নারকেলডাঙ্গা থানার টহলদার গাড়িও। বোমার শব্দ পেয়ে তাঁরা এ দিকেই আসছিলেন বলে জানান এক এএসআই। গাড়িতে বোমা ও গুলির আঘাত স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে বুলেটের খোল। কিন্তু কেন অঙ্কিতের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ও গুলি ছুড়ে পালাল দুষ্কৃতীরা?
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, অক্টোবর মাসে অঙ্কিতের বাড়ি ও অফিসে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে ফোন গিয়েছিল। কোনওবারই তাঁকে পাওয়া যায়নি। আমহার্স্ট স্ট্রিট ও সেক্টর ফাইভ থানায় বিষয়টি জানান অঙ্কিত। কী কারণে ফোন দু’টি করা হয়েছিল তা স্পষ্ট না হলেও সেই ঘটনার সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। |