বন্ধ ও রুগ্ণ কারখানার সমস্যা মোকাবিলায় এক নতুন পথের কথা বললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রস্তাব, একাধিক বন্ধ বা বন্ধ হওয়ার মুখে, এমন কারখানার সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকায় অল্প সংখ্যক রুগ্ণ সংস্থাকে চাঙ্গা করা। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও বস্ত্রমন্ত্রী আনন্দ শর্মা এই প্রস্তাব লুফে নিয়ে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পুনরুজ্জীবনে এটি একটি মডেল হতে পারে।
শুক্রবার হাওড়ায় দাসনগরে ন্যাশনাল টেক্সটাইল কর্পোরেশন (এনটিসি)-এর পুনরুজ্জীবিত আরতি কটন মিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ধরুন বন্ধ বা বন্ধ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে এমন ১০টি কারখানা রয়েছে। সবক’টি চাঙ্গা করার সম্ভাবনা নেই। সে ক্ষেত্রে ৮টি কারখানার সম্পত্তি বিক্রি করে, সেই টাকায় দুটি কারখানাকে চাঙ্গা করে তোলা হোক। এবং সেই দু’টি কারখানাতেই ওই ৮টি কারখানার সব কর্মীকে নিয়োগ করা হোক। এতে এক দিকে যেমন কর্মীদের চাকরি বজায় থাকবে, তেমনই অন্য দিকে অন্তত দু’টি কারখানকে চাঙ্গা করে তোলা সম্ভব হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব সমর্থন করেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী আনন্দ শর্মা। তিনি বলেন, “এটা একটি অভিনব প্রস্তাব। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ক্ষেত্রে ওই ধরনের মডেল অনুসরণ করা যায় কি না, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা যেতে পারে।”
এনটিসি-র পুনরুজ্জীবন প্রকল্প অনুযায়ী রাজ্যে মোট ৪টি মিল চালু রাখার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে আরতি কটন মিল এবং নদীয়ার কাঁটাগঞ্জে বেঙ্গল ফাইন দু’নম্বর মিল এনটিসি নিজেই চালাবে। বাকি দুটি চালানো হবে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। সেই মতোই ৫১ কোটি টাকা খরচে আরতি মিল আধুনিকীকরণ করা হয়। পুনরুজ্জীবিত ওই মিলে উৎপাদন শুরু হয় ২০০৮-এর মাঝামাঝিই থেকেই। ওই মিলে হোসিয়ারি পণ্য তৈরির জন্য বছরে ১৪ লক্ষ টন সুতো উৎপন্ন হয়।
বর্তমানে মিলে ৩০০ কর্মী। তবে তাঁরা প্রায় সকলেই অস্থায়ী। এনটিসি-র তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ মজুমদার বলেন, “ওই সব কর্মীকে স্থায়ী করার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীর কাছে দাবি করেছি।” চাঙ্গা করার তালিকায় থাকা বিষড়ার লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল এবং সোদপুরের সোদপুর কটন মিল বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও যে সংস্থার সঙ্গে এ ব্যাপারে চুক্তি হয়েছিল, তারা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করেনি। এর ফলে এনটিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই দুটি মিলও নিজেরাই চালাবে। এ ব্যাপারে যত শীঘ্র সম্ভব কাজ শুরু করা হবে বলে এ দিন অনুষ্ঠানের শেষে জানান কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের সচিব রীতা মেনন।
রাজ্যে পাট এবং বস্ত্র শিল্পের উন্নতির জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য হাত মিলিয়ে কাজ করবে বলে এই দিন প্রতিশ্রুতি দেন রাজ্য সফরে আসা কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী। চটকল এবং কাপড় কল চাঙ্গা করতে কেন্দ্র রাজ্যকে সব রকম সহযোগিতা করবে বলে তিনি জানান। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে টেক্সটাইল পার্ক বা ‘হাব’ তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ রক্ষার ব্যাপারেও কেন্দ্রীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন শর্মা। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে হস্ত-তাঁত চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে শান্তিপুরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়বে কেন্দ্র। গড়া হবে দু’টি গুচ্ছ ভিত্তিক ‘টেক্সটাইল ক্লাস্টার’-সহ আরও প্রকল্প। |