উত্তরপাড়া শহরে ওল্ড এবং নিউ জি টি রোডের সংযোগস্থলে, গৌরী সিনেমার মোড়ে শনিবার খুলল আনন্দ পাবলিশার্সের নতুন গ্রন্থবিপণি। তাকে ঘিরে কলকাতা-লাগোয়া এই শহরে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় প্রদীপ জ্বালিয়ে বিপণির উদ্বোধন করেন আইন বিশেষজ্ঞ শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দিলীপ যাদব, শ্রুতিনাথ প্রহরাজ, শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়-সহ গুণিজনেরা। উদ্বোধনের পরে পাঠকের ভিড়ে ভেসে যায় নতুন বিপণিটি।
এর আগে আনন্দ গ্রন্থবিপণি চালু হয়েছে জেলার চন্দননগরে। গ্রন্থবিপণি খোলা হয়েছে বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়াতেও। এই নিয়ে ১৬টি বিপণি চালু হল।
উদ্বোধনের পরে শক্তিনাথবাবু বলেন, “জেলায় সাহিত্যচর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার শুভ উদ্যোগ এই বিপণি। যেখানে গিয়ে মানুষ আধুনিক সাহিত্যের স্বাদ পাবেন। বাড়ি কাছেই মনের মতো বই কিনতে চেয়ে উত্তরপাড়ার মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা এ বার মিটল।” |
আনন্দ পাবলিশার্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর মিত্র বলেন, “কলেজ স্ট্রিটের বাইরে বইকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগ। কলকাতা ছাড়িয়ে বাংলার মফস্সলে সাহিত্যচর্চার প্রসার ঘটাতেই আমরা একের পর এক পুস্তক বিপণি চালু করছি। এই বিপণিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠবে স্থানীয় সাহিত্যিক বা কবিদের অনুশীলন কেন্দ্র। এখানকার পুস্তক সম্ভার দেখে তাঁদের উৎসাহিত হওয়ার কথা।” তিনি জানিয়েছেন, প্রায় তিন হাজার ধরনের বই পাওয়া যাবে এখানে।
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপণি খোলা থাকবে প্রতি দিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। বন্ধ থাকবে শুধু বৃহস্পতিবার। ক্রেতাদের উৎসাহ দিতে দেওয়া হচ্ছে কিছু বাড়তি সুবিধাও। যেমন ২০০ টাকার বই কিনলে ক্রেতা পাবেন বাড়তি ৫০ টাকার বই। ২০০ টাকার উপরে প্রতি ১০০ টাকায় মিলবে অতিরিক্ত ২৫ টাকার বই।
চন্দননগরের পরে উত্তরপাড়ার এই বিপণিরও দায়িত্বপ্রাপ্ত সুব্রত ঘোষ। হাসি মুখে সমস্ত পাঠককে বিপণিতে ঢোকার সুযোগ করে দিতে দিতে সকলের সঙ্গে কথা বলছিলেন। উত্তরপাড়ার এই গ্রন্থবিপণি নবীন প্রজন্মের কাছে বাড়তি পাওনা। বই বাছাইয়ের ফাঁকে ফাঁকে সারাক্ষণ ধরেই চলেছে আড্ডা। সাহিত্যিক সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “উত্তরপাড়া বইপিপাসু মানুষের পীঠস্থান। এখানকার গর্বের মুকুটে এটা বাড়তি পালক।”
বাবার হাত ধরে বিপণিতে এসেছিল এক খুদে পাঠক। দোকানের র্যাকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষীরের পুতুল’ বইটি দেখে সে বলে, “বাবা ওই বইটা তো আমাদের বাড়িতেও আছে।” পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। তিনি খুদে পাঠককে বলেন, “আরে ওটা পিঁপড়েতে খেয়ে নেয়নি তো! কিংবা পচে যায়নি তো!” মুহূর্তে হাসির রোল ওঠে। লেখক-পাঠককে কাছাকাছি এনে দিয়েছে তো এই বিপণিই! সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। ফেরার সময়ে অনেকেই হাসি মুখে বলেন, “বেশ সুবিধা হল। বই কিনতে আর কলকাতা বা চন্দননগর ছুটতে হবে না।” |