ভারতকে বাণিজ্যে ‘সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ’ (এমএফএন)-এর মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকিস্তান এখনও কিছুটা ধোঁয়াশা বজায় রেখেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে ইসলামাবাদ যাতে পিছিয়ে না যায়, সেজন্য কূটনৈতিক চাপ তৈরি করে রাখল ভারত। এ দিন কানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেন, “ভারতকে এমএফএন মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। ভারত ১৭ বছর আগে পাকিস্তানকে এই মর্যাদা দিয়েছিল। ইসলামাবাদ অনেক দেরি করল। তবে দেরিতে হলেও যে হল, সেটাই ভাল।”
পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার পক্ষপাতী মনমোহন বরাবরই বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই সার্কভুক্ত দেশগুলোর আর্থিক বিকাশ ঘটবে। এবং পাকিস্তানের তরফে ভারতকে এমএফএন মর্যাদা দেওয়ার ‘সিদ্ধান্ত’ সেই নীতির প্রতিফলন বলে মনে করেন মনমোহন। তাঁর কথায়, “এটা যদি এক নতুন মানসিকতার ইঙ্গিত হয়, তা স্বাগত। আমাদের বিষয়টি দেখতে হবে।” বছর খানেক আগে থিম্পুতে দুই প্রধানমন্ত্রীর যে বৈঠকে আলোচনার পথ নতুন করে খুলেছিল, তাতেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এমএফএন মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।
গত পরশু মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে পাক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতকে এই মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ওয়েবসাইটেও সেই বিবৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেই বিবৃতি তুলে নিয়ে অন্য বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে এই সিদ্ধান্তের কথা ছিল না। এবং তার পরে সরকারি মুখপাত্ররা যে সাংবাদিক বৈঠক করেন, তাতেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা থাকলেও এমএফএন প্রসঙ্গটি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও জানায়, সরকারি ভাবে তাদের কিছু জানানো হয়নি। আজ নয়াদিল্লিতে পাক হাই কমিশনার শাহিদ মালিক বলেন, “ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে। এমএফএন মর্যাদা দেওয়া তারই অঙ্গ। পাকিস্তান এ ব্যাপারে কোনও সুর বদল করছে না।” নয়াদিল্লিতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র বলছে, এই মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরাসরি গৃহীত হয়েছে, তা প্রথম বার বললেও পরে আর তা সরাসরি বলা হচ্ছে না। পাকিস্তানে সেনা, অসামরিক সরকার,ক্ষমতার এই নানা কেন্দ্রের টানাপোড়েনের প্রতিফলনই এই ‘সুর বদলের’ পিছনে দেখা যাচ্ছে বলেও চর্চা শুরু হয়েছে। ওই সূত্রের ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করতে চাইলেন যাতে ইসলামাবাদ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে বা তা রূপায়ণে টালবাহানা না করে। ১০ তারিখ মলদ্বীপে সার্ক সম্মেলনে ভারত-পাক প্রধানমন্ত্রীর দেখা হওয়ার কথা। তার আগে মনমোহন এই কূটনৈতিক চাপ দিয়ে রাখলেন। ১৪-১৫ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে দুই দেশের বাণিজ্যসচিবও বৈঠক করবেন।
তার আগে আজ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার। সেই বৈঠকে আইএসআই প্রধান সুজা পাশাও ছিলেন বলে একটি সূত্রের দাবি। পাক বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি বলছে, ‘ভারতের সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়া সহ-বিদেশনীতির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’ বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে বা তাতে কারা ছিলেন, সে সম্পর্কে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের ওই সূত্রটি বলছে, সুজা পাশা ছাড়াও পাক প্রতিরক্ষাসচিব, বাণিজ্যসচিব, অন্তর্বর্তী সচিব এবং পাক সেনার জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের অফিসাররা ছিলেন। |