বাঁশপেটা করে খুন দশম শ্রেণির ছাত্রকে
তাঁর কাকা গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসানোর জায়গা দিয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করল একদল দুষ্কৃতী। মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ কালিয়াচক থানার রামনগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম বিশ্বজিৎ মণ্ডল (১৫)।
এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ শাহাবাজপুরে টিউশন সেরে বন্ধুদের সঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল বিশ্বজিৎ। ওই সময়ে ফাঁকা রাস্তায় কয়েকজন দুষ্কৃতী বিশ্বজিৎকে মোটর বাইকে তুলে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরের একটি মাঠে নিয়ে মারধর শুরু করে। পুলিশ সেখানে গেলে দুষ্কৃতীরা পালায়। রক্তাক্ত বিশ্বজিৎকে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় এলাকার বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, সিপিএমের একাংশের মদতে পুষ্ট ওই দুষ্কৃতী দলটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দৌরাত্ম্য চালাচ্ছে। সম্প্রতি মালদহের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব নেন জয়ন্ত পাল। তিনি বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়ে তল্লাশি জোরদার করেন। হাটে থাকা পুলিশ ক্যাম্পটি সরিয়ে বিশ্বজিতের কাকা হেমন্ত মণ্ডলের বাড়ির সামনের জায়গায় নিয়ে যান। কারণ, ওই পরিবারের লোকজন দুষ্কৃতীদের বিরোধিতায় সরব হওয়ায় তাঁদের উপরে হামলার আশঙ্কা ছিল পুলিশের। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে বলে হেমন্তবাবু স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রক্ষা করতে গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসাতে উদ্যোগী হয়েছিলাম। সেই রাগে দুষ্কৃতীরা আমার ভাইপোকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে।” পাশাপাশি, কী ভাবে এখনও দুষ্কৃতীরা বন্দুক, পিস্তল নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর সাহস পাচ্ছে, সেই প্রশ্নেও বিস্মিত হেমন্তবাবুরা।
দুষ্কৃতীদের মারে নিহত বিশ্বজিৎ মণ্ডল। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ওই দুষ্কৃতী দলের দৌরাত্ম্যের কথা শুনি। পুলিশ ক্যাম্পটি হাট থেকে সরিয়ে মণ্ডল পরিবারের বাড়ির সামনে নেওয়া হয়। দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু, তল্লাশির সময়ে সোমবার দুষ্কৃতী দলের পাণ্ডা সন্দেহে বিজয় মণ্ডল নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরেই দশম শ্রেণির ওই ছাত্রটিকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাদের ধরতে তল্লাশি চলছে।”
কালিয়াচকের ওই গ্রামের কাছেই চরি-আনন্দপুর সীমান্ত ক্যাম্প। পাশেই বাংলাদেশ। এলাকা দিয়ে গরু পাচার, বেআইনি পোস্ত চাষ ও হাট-বাজার থেকে তোলা আদায়ের কাজ করছিল দুষ্কৃতী দলটি। এতদিন বাসিন্দারা বহুবার আর্জি জানালেও কাজের কাজ হয়নি। সম্প্রতি নতুন সরকার গঠনের পরে বাসিন্দারা জোট বাঁধেন। কংগ্রেসের নেতারাও বাসিন্দাদের পাশে সামিল হন। পুলিশও নড়েচড়ে বসে।
পুলিশ জানায়, এলাকায় ঢুকতে না-পেরেই আতঙ্ক ছড়াতে খুনের রাস্তা বেছে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। হাসপাতালে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন পেশায় হলুদের ব্যবসায়ী অমূল্য মণ্ডল। তিনি বলেন, “দুষ্কৃতীদের হাত থেকে গ্রামের মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ছেলেকে খুন হতে হল। ছেলে পড়তে বেরিয়ে যাওয়ার পরই আমি হলুদ ভাঙাতে গিয়েছিলাম। সেখানেই শুনি দুষ্কৃতীরা আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে।”
এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন মালদহ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রিয় সাহা। তিনি বলেন, “পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। না হলে এত অভিযোগ জানানোর পরেও কেন দুষ্কৃতীরা সকলে ধরা পড়ছে না।” কালিয়াচকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “যারা এই কাজ করেছে তারা আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। বেশ কিছুদিন ধরে কালিয়াচকে অরাজক অবস্থা চলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.