দেখে চলুন
গাড়ির ধাক্কায় আমরা কেন মরব? গাড়ি আস্তে চালান, উত্তরপুরুষ’কে বাঁচতে দিন’-- বন্য প্রাণীদের হয়ে গাড়ি চালকদের উদ্দেশে এ হেন আর্জি জানিয়েছে বনবিতান। লাটাগুড়ি বনাঞ্চলের ভেতরে সবুজ চিরে সিঁথির মতো চলে গিয়েছে ৩১ নং জাতীয় সড়ক। এই বনপথ ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ, পথের দু’পাশে সবুজে সবুজে ভরা বনানী। লেপার্ড, বাইসন, হরিণ কী দিনে, কী রাতে প্রায়ই এক পাশের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তা টপকে চলে যায় অন্য পাশের জঙ্গলে। দঙ্গল বেঁধে হাতির দল পথ অবরোধ করে দাঁড়ায় হামেশাই। এই জাতীয় সড়ক ধরে রোজ অসংখ্য যান চলাচল করে। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। ডুয়ার্সের নদী থেকে বোল্ডার তুলে বোঝাই করা ট্রাক তো আছেই, চা-পাতা ভর্তি যান, যাত্রীবাহী গাড়িগুলি যাতায়াতের সময় গাড়ির ধাক্কায় প্রায়ই বন্য প্রাণীদের মৃত্যু ঘটে। পাথর কিংবা চা-পাতা বোঝাই করা পণ্যবাহী গাড়িগুলির খুব দ্রুত গতিতে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এ বার তাই ওই পথে যাতায়াতকারী গাড়ি চালকদের সতর্ক করতে ওই হোর্ডিং। মাস তিনেক হল প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্রের সামনে এমনই সতর্কবাণী চোখে পড়ছে। এরই সঙ্গে রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকা রাস্তায়ও যাতে গাড়ি চালকদের নজর পড়ে, সে কারণে গ্লো-সাইন বোর্ড লাগিয়ে তাতে গাড়ি ধীর গতিতে চালাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
ছবি: অনিতা দত্ত
১৫ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যটকদের বনভ্রমণ বন্ধ থাকে। কিন্তু যাত্রীবাহী বা পণ্যবাহী যানবাহন চলেই। এই সময় গাড়ি থামিয়ে বনকর্মীরা চালকদের বুঝিয়েছেন। তাতে ফলও মিলেছে। গরুমারা সাউথ রেঞ্জের রেঞ্জার বিমল দেবনাথ জানিয়েছেন, ‘এতে গাড়ির ধাক্কায় বন্যপ্রাণীর মৃত্যু অন্তত ৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে। আগে তো বেশ কয়েকটি বাইসন, লেপার্ড, গন্ধগোকুল, কাঠবেড়ালী, শাঁখামুটি সাপ, এ ছাড়া অসংখ্য ছোট প্রাণী মারা গিয়েছে। বনাঞ্চলে যাতায়াতকারীরা একটু পরিবেশ সচেতন হবেন, বন্যপ্রাণ-প্রেমী হবেন, এটুকু আশা করাই যেতে পারে। বনকর্মীরা সেটাই সকলকে বোঝাচ্ছেন।’

সংস্কৃতিপ্রেমী
তিনি নিমাইচন্দ্র সরকার। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডি থানার দুর্গাপুরে বাড়ি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। অভাব-দারিদ্রের সংসারে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গান শেখা। সরকারি চাকুরি জোটেনি। বয়সও পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ৪৬ বছরের মানুষটি এখনও আঠারোর তরুণ। ছোটবেলার শেখা গান-বাজনার বিদ্যাটাই আজকের পেশা ও নেশা। চিরতরুণ এই লোকটি সকাল সাতটায় বেরিয়ে যান কুশমণ্ডি, বুনিয়াদপুরে গানের টিউশনি করাতে। রাত ন’টা-দশটায় ফেরেন। জল-কাদার রাস্তায় সাইকেল ঘাড়ে করে একটা বড় বিল পেরোতে হয়। ভয়ডর বলতে সাপ-পোকামাকড়। কিন্তু সব থেকে বড় ভয় পান সংস্কৃতির অবক্ষয় দেখে। নিজের বাড়ি দুর্গাপুর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ডিকুলে ঘর ভাড়া নিয়ে তৈরি করেছেন ‘পুষ্পরাজ মিউজিক কলেজ’। নাচ-গান-তবলা ও অঙ্কন শিক্ষার এক প্রতিষ্ঠান, যা গ্রামের ছেলেমেয়েদের কাছে একটু উন্মুক্ত উদ্যান। কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও নিমাইবাবু এলাকায় পরিচিত নাম। ‘স্বপ্নের স্বর্ণলতা’ ও ‘হাউসের সাধুগিরি’ নামে দু’টি গানের ভিসিডি প্রকাশ করেছেন বছর কয়েক আগে। এলাকার কিছু লোকশিল্পীকে নিয়ে তিনি একটি নাট্যদলও গঠন করেছেন। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পণপ্রথা, বাল্যবিবাহ কেন্দ্র করে লেখা পথ-নাটিকা ‘জাগরণ’ এক বছরের মধ্যে ৩১টি সফল অনুষ্ঠান করেছে। লোকসংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক আজন্মকালের। এবং সংগ্রহের ঝুলিটিও নিতান্ত নগণ্য নয়। ‘চন্দ্রমিলন’ ছদ্মনামে ইতিমধ্যে লিখে ফেলেছেন অসংখ্য লোকগল্প। কিন্তু সব পরিচয় পিছনে ফেলে তিনি আজ ‘মেঠো পথ’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির এই পত্রিকাটি তিনি সাত বছর ধরে সম্পাদনা করছেন। তিনি ‘মেঠো পথ’ গোষ্ঠীর কর্ণধারও বটে। নিমাইবাবুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা লোকসংস্কৃতি চর্চা ও প্রতি গ্রামে বিশেষ করে প্রান্তিক গ্রামে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
ছবি: বিপ্লবকুমার রায়

জৈবিক মাছচাষ
রবিবাসরীয় দুপুরে ভুরিভোজের পর তৃপ্তির ঢেকুর তুলল মাছপ্রিয় বাঙালিরা, কিন্তু জানল কি সাধের মাছ তার শরীরে ঢুকিয়ে দিল একটুখানি বিষ! এ বার আর চিন্তা নেই। পথ দেখাচ্ছে দক্ষিণ দিনাজপুর। জৈবিক উপায়ে মাছ চাষে বাঙালির পাতে পড়বে সুস্থ বিষহীন মাছ। তবে কি আমরা এত দিন খেতাম বিষযুক্ত মাছ? ‘অবশ্যই’, বললেন যাঁর হাত ধরে দক্ষিণ দিনাজপুর জৈবিক মাছ চাষের অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সেই সুপ্রিয় মোহান্ত। ইউরিয়া, ফসফেট, ডি এ পি-র অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈজ্ঞানিক ব্যবহারে মাছের শরীরে বেঁধেছে নানা ধরনের রোগ। আর তা আমাদের শরীরেও চলে আসছে। জৈবিক উপায়ে মাছ চাষের মাধ্যমে সেই অপূরণীয় ক্ষতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বর্তমান এখানে জৈব পদ্ধতিতে প্রায় ২০০টি পুকুর-দিঘিতে মাছচাষ হচ্ছে। সংখ্যাটি প্রতিদিন বাড়ছে। আর তাই ত্রিমোহনী, প্রাণসাগর, কাশেম মোড়, তপনদিঘি, পৈতা দিঘি, রতনপুর, বোল্লা, বাউল-এ গেলেই দেখা মিলবে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের। প্রধানত শুঁটকি মাছের গুঁড়ো, রেশম কীটের গুঁড়ো, হাড় থেকে নির্মিত সার এই জৈব সারের প্রধান উপাদান।
ছবি: তুহিনশুভ্র মণ্ডল
মাছচাষি গুলজার হোসেন, জর্জিস সরকারের কথায়, আগে মাছে ঘা দেখা যেত, মেঘলা দিন হলেই মাছ ভেসে উঠত, মাছের স্বাস্থ্যও ভাল হত না। কিন্তু জৈব সার ব্যবহারে এই সমস্যাগুলি আর দেখা যায় না। একই সঙ্গে মাছের স্বাদও অপূর্ব। জলের নীচে স্থিত মিথেন’কে সরিয়ে, পি এইচ’কে নিয়ন্ত্রণ করে জৈব মাছচাষে আর্থিক লাভও প্রচুর। বর্তমনে বিপুল চাহিদাযুক্ত এই মাছের বাজার তাই দক্ষিণ দিনাজপুর ছাড়িয়ে মালদহ, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ এমনকি কলকাতাও। পরিবেশপ্রেমী সুভাষ দত্ত তাঁর পুত্রের বিবাহ-পরবর্তী প্রীতিভোজের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে দক্ষিণ দিনাজপুরের এই মাছই রেখেছিলেন মেনু কার্ডে। দক্ষিণ দিনাজপুরে জৈবিক পদ্ধতিতে মাছ চাছের মাধ্যমেই জেলার সামগ্রিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন সুপ্রিয়। আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারেন ৯৪৭৫২১০৫৭৭-এ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.