দোষী ব্রিটিশ আদালতে, গড়াপেটায় জেলে যাওয়ার মুখে বাট ও আসিফ
ক দিকে নবজাতকের আবির্ভাব, অন্য দিকে কারাবাস!
ট্র্যাজেডি তার যাবতীয় সম্ভাবনার নিষ্ঠুরতম প্রতিমূর্তি হয়ে মঙ্গলবার সলমন বাটের জীবনে আবির্ভূত। আজ সকাল পৌনে বারোটা নাগাদ স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক বাটকে যখন দোষী সাব্যস্ত করছিল লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্ট, শোনাচ্ছিল ঐতিহাসিক রায়, তার ঠিক এক ঘণ্টা আগে সাড়ে ন’হাজার কিলোমিটার দূরে লাহৌরের এক হাসপাতালে বাটের স্ত্রী গুল হাসান জন্ম দিচ্ছিলেন তাঁদের দ্বিতীয় সন্তানের!
লন্ডনের আদালতে ক্রিকেট কলঙ্কিত হতে পারে, ক্রিকেটারকে গারদের ও-পারে ছুড়ে ফেলা হতে পারে, কিন্তু একই দিনে একই খেলায় থাকছে গর্বিত হওয়ার উপাদানও। আজই নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে সম্মানিত করল বিশ্বকাপ জয়ী ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে, যিনি বলে দিলেন, “স্পট ফিক্সিং জঘন্য অপরাধ। দেশের হয়ে খেলার সময় গড়াপেটা করা আরও বড় অপরাধ। জঘন্য কাজ করলে কঠোরতম শাস্তির জন্যও তৈরি থাকা উচিত।”
বিধ্বস্ত জুটি। লন্ডনের আদালতে বাট ও আসিফ। ছবি: রয়টার্স, এএফপি।
কঠোরতম শাস্তিই বটে! প্রতারণা এবং অসদুপায়ে অর্থ উপার্জনের ষড়যন্ত্রের দায়ে বারো সদস্যের জুরির ১০-২ রায়ে ২৭ বছরের বাট দোষী প্রমাণিত। একই দোষে দোষী ২৮ বছরের পেসার মহম্মদ আসিফও। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটের বিতর্কের পরে বিচারপতি কুক এই রায় শোনান। যে দোষে দোষী, তাতে সাত বছরের কারাবাস নিশ্চিত বাট এবং আসিফের। বাইশ গজের বদলে লন্ডনের কারাগারই তাঁদের নতুন ঠিকানা হতে চলেছে। শাস্তির মেয়াদ ঠিক কত দিন তা জানা যাবে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত শুনানির শেষে। আর এক অভিযুক্ত মহম্মদ আমের নাকি দোষ স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ভয়ঙ্কর চাপ ও হুমকির সামনে পড়েই তাঁকে ওই কাজ করতে হয়েছিল।
অতীতে ক্রিকেটাররা ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে বোর্ড বা আইসিসি কর্তৃক নির্বাসিত হয়েছেন, কিন্তু সরাসরি কারাবাস একেবারেই নজিরবিহীন। যে কারণে এই রায়কে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। হ্যান্সি ক্রোনিয়ে ক্রিকেট থেকে চিরনির্বাসিত হয়েছিলেন, যেমন হয়েছিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হলেও সমাজে বেঁচে থাকতে অসুবিধে হয়নি বর্তমানে লোকসভার সাংসদ আজহারের। কিন্তু বাটদের ব্যাপারটা অন্য রকম। নির্বাসনের সঙ্গে কারাবাসও করতে হবে।
গত এক মাস ধরে গোটা ক্রিকেট বিশ্বের নজর ছিল লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টের আদালত কক্ষে। অভিযোগ ছিল, গত বছরের ২৬-২৯ অগস্ট লর্ডসে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড টেস্টে ইচ্ছাকৃত ভাবে তিনটি নো বল করা হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই ক্রিকেট দুনিয়ায় ‘স্পট ফিক্সিং’ হিসেবে পরিচিত। বিচারপতি কুক যখন আদালত কক্ষে জুরিকে রায় শোনাচ্ছিলেন, ভেলভেট জ্যাকেট এবং টাইহীন একটা শার্ট পরে পাথুরে মুখ নিয়ে তা শুনছিলেন বাট। আসিফও একেবারেই প্রতিক্রিয়াহীন। আদালত কক্ষে থাকা বিবিসি প্রতিবেদক জেমস পিয়ার্সের ভাষায়, “স্টোনি ফেস্ড।” পরে অবশ্য আদালত থেকে বেরিয়ে ক্যামেরার সামনে সব প্রতিরোধ শেষ, কান্নায় ভেঙে পড়েন বাট। ইংল্যান্ডের জুয়া আইনে (গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ২০০৫) এই প্রথম কোনও ক্রীড়াবিদ দোষী প্রমাণিত। দোষী দুই ক্রিকেটার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুইৎজারল্যান্ডের লুসানে ক্রীড়া দুনিয়ার সর্বোচ্চ আদালত ‘কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট’-এ আবেদন করছেন। এর আগেই বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি দোহায় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির শুনানির পরে দুই ক্রিকেটারকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাসিত করেছে।
স্বভাবতই রায় ঘোষণার পরেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে প্রতিক্রিয়া। টুইটার বা ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তা ক্রমাগত বিস্ফোরণের মতো আছড়ে পড়েছে। পাকিস্তানে গত এক মাস ধরেই বহুল প্রচারিত এই খবর। তাই অধীর আগ্রহে সাধারণ মানুষ অপেক্ষা করেছেন রায়ের জন্য। আসিফ ইকবাল থেকে রামিজ রাজা, মাইকেল ভন থেকে ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, সকলেই প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এই রায়কে স্বাগতই জানিয়েছেন। আসিফ ইকবাল যেমন বলেছেন, “ক্রিকেটের পক্ষে দুঃখজনক দিন। এই রায় বিশ্বের সর্বত্র উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটা বার্তা।” আর এক প্রাক্তন পাকিস্তান অধিনায়ক রামিজ রাজার বক্তব্য, “এই রায়কে স্বাগত। আশা করি এই রায় থেকে বেরিয়ে আসা বার্তাটা তরুণ প্রজন্ম বুঝতে পারবে।” কোনও সন্দেহ নেই, কারাবাসের রক্তচক্ষুও আজ থেকে ক্রিকেটারের জীবনে ঢুকে পড়ল।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.