ইঁদুর নিধনের প্রস্তুতি শুরু করল শুল্ক বিভাগ।
কলকাতা বিমানবন্দরে শুল্ক দফতরের এলাকায় যে ঘরে ধেড়ে ইঁদুরের প্রবল উপদ্রব, সেখানে প্রচুর যাত্রীর ব্যাগ জমে পড়ে রয়েছে। মঙ্গলবার শুল্ক দফতরের কমিশনার গুরদীপ সিংহ বলেন, “তিন দিনের মধ্যে ঘর খালি হয়ে যাবে। আমার সঙ্গে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে। খালি ঘর ওদের হাতে তুলে দিলে ইঁদুর মারা শুরু হবে।”
এখন যে সব ব্যাগ ওই ঘরে জমে রয়েছে, সেগুলো প্রধানত বাংলাদেশি ‘বিমান’ সংস্থার যাত্রীদের। জমিয়ে রাখার মাসুল বাবদ বিমানসংস্থাটির তরফে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষকে ব্যাগপিছু সপ্তাহে মাত্র পাঁচ টাকা দিতে হয়। এবং সেই কারণেই তারা ব্যাগগুলোর গতি করার ব্যাপারে গা করছিল না বলে অভিযোগ। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। গুরদীপ স্বয়ং ‘বিমান’-এর রিজিওনাল ম্যানেজার মহম্মদ আলাউদ্দিনকে বলে দিয়েছেন, আজ বুধবারের মধ্যে সমস্যার সমাধান না-হলে বিশাল অঙ্কের জরিমানা করা হবে।
পুরো ঘটনার মূলে সেই ইঁদুর!
চিন থেকে ফিরে ঠিক সময়ে নিজের ব্যাগ পাননি রিষড়ার ব্যবসায়ী গৌতম দাস। ব্যাগটি পরে কলকাতায় পৌঁছে ঠাঁই পায় শুল্কের ওই ঘরে। গৌতমবাবু দিন পাঁচেক পরে সেখানে নিজের ব্যাগ খুঁজে পান বটে, কিন্তু দেখেন, ইঁদুরের দল প্রাণের সুখে সেটি কুটিকুটি করে কেটেছে। শুল্ক-কর্তারা তখনই নড়েচড়ে বসেন।
মাঝেমধ্যে ভুলক্রমে যাত্রীর সঙ্গে তাঁর ব্যাগ বিমানবন্দরে পৌঁছায় না। পরে এলে সেটি শুল্ক বিভাগের ঘরে রাখা হয়, যাত্রী সুবিধামতো এসে তা নিয়ে যান। অভিযোগ, গত মাস দেড়েক যাবত ঢাকা থেকে নিয়মিত আসা প্রচুর ব্যাগ জমে যাচ্ছে। কাপড়ের ব্যাগগুলোয় জামা-কাপড় ছাড়াও রয়েছে ফলমূল, এমনকী আচারও। যাতে আকৃষ্ট হয়ে ইঁদুরের দল ওখানে দৌরাত্ম্য শুরু করেছে বলে শুল্ক-অফিসারেরা মনে করছেন। তাঁদের অভিযোগ, এত ব্যাগ জমে যাওয়ায় ঘরটা পরিষ্কারও করা যায়নি।
কিন্তু ওই সব ব্যাগের মালিক কারা?
বিমানবন্দর সূত্রের খবর: কলকাতার ছোটখাটো যে সব ব্যবসায়ী নিয়মিত ঢাকা ঘুরে ব্যাঙ্কক-হংকং যাতায়াত করেন (কেরিয়ার), ব্যাগগুলো মূলত তাঁদেরই।
ওঁদেরই ব্যাগ বেশি জমছে কেন?
বিমানবন্দর সূত্রের ব্যাখ্যা: ব্যাঙ্কক-হংকং ও ঢাকার মধ্যে বড় বিমান যাতায়াত করে। তাতে ব্যাঙ্কক ও হংকং থেকে প্রচুর মালপত্র নিয়ে ছোট ব্যবসায়ীরা ঢাকায় আসছেন। কিন্তু সব মাল কলকাতায় আনতে পারছেন না, কেননা ঢাকা-কলকাতা ছোট বিমান চলে। তাই অনেক মাল আসছে পরের বিমানে। বস্তুত গত দেড় মাস ধরে এ ভাবেই ঢাকা ও কলকাতা বিমানবন্দরে মালপত্রের পাহাড় জমতে শুরু করেছে।
এর সুরাহা হবে কী করে? ‘বিমান’-এর মহম্মদ আলাউদ্দিন এ দিন বলেন, “ঢাকায় জমে থাকা সমস্ত মাল আজই বড় এয়ারবাসে চাপিয়ে কলকাতায় আনা হয়েছে। সমস্ত যাত্রীকে খবর পাঠিয়ে বলা হয়েছে নিজেদের ব্যাগ নিয়ে যেতে।” |