সম্পাদকীয় ১...
আলঙ্কারিক
রাজধানীতে রাষ্ট্রপতি ভবনে সেই দিন প্রধানমন্ত্রী যখন বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত জানিতে চাহিলেন, সকলেই একবাক্যে জানাইলেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতার সম্প্রসারণ ভিন্ন রাজ্যপাল পদটি অর্থহীন। উল্লেখযোগ্য, পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশ তিন রাজ্যের রাজ্যপালই প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণ করিলেন নিজ নিজ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রশাসনিক ব্যবস্থার দিকে। এমনকী উপাচার্য নিয়োগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপালের কোনও ভূমিকা না থাকিলে তাঁহাদের কার্যকারিতা কী এই তাঁহাদের প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় সরকারের অভিমত অবশ্য ভিন্ন। নিজেদের বর্তমান সাংবিধানিক সীমারেখার মধ্যেই রাজ্যপালরা ‘আরও একটু’ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুন, ইহাই কেন্দ্রের অবস্থান। রাজ্য সরকারগুলির মত, রাজ্যপালদের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা রহিয়াছে, ইহার অপেক্ষা বেশি ভূমিকা তাঁহাদের প্রাপ্য নহে। জটিল সমস্যা। তবে একটি বিষয় গোড়াতেই স্পষ্ট হওয়া দরকার। মূল সমস্যা রাজ্যপালের সক্রিয়তার মাত্রা কিংবা ভূমিকার পরিমাণ লইয়া নহে। ‘রাজ্যপাল’ই মূল সমস্যা। ভারতীয় সংবিধানমতে, অঙ্গরাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি তথা রাজ্যের এই প্রতীকী সর্বোচ্চ পদটিই সমস্যাজনক। নির্বাচিত প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা যেখানে শাসনবিভাগের সর্বতো দায়িত্বপ্রাপ্ত, সেখানে এই ধরনের প্রতীকী পদের প্রয়োজন ঠিক কী ও কতখানি, তাহা লইয়া প্রথমাবধি সমস্যার শেষ নাই। আবার, যে দেশ প্রথম হইতেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী চলিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, সেখানেও রাজ্যে কেন্দ্রের এত গুরুতর এক জন প্রতিনিধির দরকার কী, তাহাও স্পষ্ট নহে। সেই কারণেই, স্বাধীনতালাভের মুহূর্ত হইতেই এই একই সংকট চলিতেছে, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু হইতে আজিকার মনমোহন সিংহ, প্রত্যেকেই রাষ্ট্রপতি কিংবা রাজ্যপালের ভূমিকা সংক্রান্ত বিতর্কের মুখোমুখি হইতেছেন। এই সংকটটিও যেন প্রতীকী। ব্রিটিশ সংবিধানের অনুসরণে ভারতীয় সংবিধানের এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য নানা সমস্যার সৃষ্টি করিয়া যেন প্রতি মুহূর্তে স্বাধীন দেশে ঔপনিবেশিক ভাবধারার অহেতুক উপস্থিতির অসঙ্গতি মনে করাইয়া দিতেছে।
ঔপনিবেশিক শাসনের উল্লেখ এখানে কেবলই আলংকারিক নহে। বাস্তবিক, ভারতীয় সংবিধানে রাষ্ট্রপতি কিংবা রাজ্যপালের পদটির মধ্যে ব্রিটিশ সংবিধান অপেক্ষা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শেষ লগ্নে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনেরই অধিক প্রভাব রহিয়াছে। উল্লেখ্য, এই ভারত শাসন আইনের সহিত কিন্তু খাস ব্রিটিশ সংবিধানের পার্থক্য অনেক। ঔপনিবেশিক শাসকরা মনে করিয়াছিলেন যে ভারতের মতো উপনিবেশের জন্য বিশেষ কিছু রক্ষাকবচ প্রয়োজন, প্রাদেশিক শাসনের সীমা নির্ধারণের জন্য প্রতি রাজ্যে কেন্দ্রীয় উচ্চ-প্রতিনিধির উপস্থিতি প্রয়োজন। সেই কাঠামো অনুসরণেই রাজ্যপাল পদটির সৃষ্টি। স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ সংবিধানের কথা মনে করিয়া পদটির ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস করা হয়। অর্থাৎ পদটির সৃষ্টিতে নহে, উপনিবেশের উত্তরাধিকার-সূত্রে প্রাপ্ত পদটিকে বাস্তবানুগ করিয়া লইবার ক্ষেত্রেই ব্রিটিশ সংবিধান অনুসৃত হয়। দ্বন্দ্বের শুরু ইতিহাসের এই পর্বেই। তখনই অপ্রয়োজনের ভিত্তিতে পদটির বিলোপ দরকার ছিল। পুরাতন এবং ঔপনিবেশিকতার বর্ণে রঞ্জিত একটি পদকে নূতন করিয়া প্রাসঙ্গিক করিতে গিয়াই সমস্যার উৎপত্তি হইল।
তদবধি সেই ট্র্যাডিশন সমানেই চলিতেছে। তদবধি, রাজ্যপাল পদাধিকারী প্রত্যহ তাঁহার এক্তিয়ার লইয়া সংকটে থাকিতেছেন। এত সম্মানিত একটি উচ্চপদ কেবলমাত্র আলংকারিক করিয়া রাখার মধ্যে যে মননহীন সাংবিধানিক উত্তরাধিকার, তাহা প্রশ্নাতীত থাকিতেছে। সব উত্তরাধিকারই কিন্তু মহৎ নহে, বহনযোগ্য নহে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার বর্জনের মধ্যেই শুভবোধের চলমানতার পরিচয়। ভারতীয় আইনপ্রণেতারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভাবিয়া দেখুন, ইহাই কাম্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.