|
|
|
|
মমতার কেন্দ্রে ভোট ৩০শে, কমিশনের দ্বারস্থ ক্ষুণ্ণ তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেড়ে যাওয়া লোকসভা কেন্দ্র দক্ষিণ কলকাতায় আগামী ৩০ নভেম্বর উপনির্বাচন হবে বলে মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি জারি করল নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, আগামী ৫ তারিখ ওই বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। অর্থাৎ, সে দিন থেকেই গোটা এলাকায় নির্বাচনী আচরণবিধি বলবৎ হবে। মনোনয়নপত্র পেশ করার শেষ দিন ১২ নভেম্বর। প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ তারিখ। ভোটগণনা ৭ ডিসেম্বর। তত দিন পর্যন্ত আচরণবিধি জারি থাকবে।
কমিশনের এই ঘোষণায় রাজ্য সরকার ‘ক্ষুণ্ণ ও উদ্বিগ্ন’। সেই উদ্বেগের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের তরফে জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে, দল হিসেবে তৃণমূলও আলাদা করে বিষয়টি নিয়ে কমিশনের কাছে দরবার করবে।
রাজ্য সরকারের উদ্বেগের কারণ তথা যুক্তি তিনটি।
প্রথমত, এর ফলে কলকাতা ও বৃহত্তর কলকাতায় উন্নয়নের কাজ থমকে যাবে। সেপ্টেম্বরে ভবানীপুর বিধানসভায় উপনির্বাচনের জন্য নির্বাচনী বিধিনিষেধ থাকায় ও অক্টোবর ‘উৎসবের মাস’ হওয়ায় কলকাতায় উন্নয়নের কাজ বন্ধ ছিল। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “এর পরে নভেম্বরে উপনির্বাচন হলে আবারও আচরণবিধি চালু হয়ে যাবে! যা জারি থাকবে ৭ ডিসেম্বর, ভোটগণনা পর্যন্ত। এই সময়ে কোনও রকম উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য অর্থবরাদ্দ করা যাবে না। যে প্রকল্প চালু রয়েছে, তার কাজও বন্ধ রাখতে হবে! ফলে পর পর তিন মাস উন্নয়নের কাজ থমকে থাকবে।”
দ্বিতীয়ত, উপনির্বাচনের দিন ক্ষণ স্থির করার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কমিশন কোনও আলোচনা করেনি। একতরফা ভাবে দিন ঘোষণা করা হয়েছে (বস্তুত, রাজ্য প্রশাসনের দাবি, ওই ভোটের খবর তারা জানতে পেরেছে সংবাদমাধ্যম থেকেই)। অথচ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিচালনার জন্য রাজ্য সরকারকেই বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্ব নিতে হয়। এ ছাড়াও, এখন ভোটার তালিকা সেংশাধনের কাজও চলছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত এ দিন জানিয়েছেন, ওই সংশোধিত তালিকা প্রকাশিত হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। প্রশাসন মনে করছে, এত ‘তাড়াহুড়ো’ করে দক্ষিণ কলকাতায় ভোট না করে সংশোধিত ভোটার তালিকা নিয়েই ওই ভোট করা যেত। তাতে মমতার ইস্তফা দেওয়ার পরের ছ’মাসের যে সময়সীমা তা পেরিয়ে যেত না।
তৃতীয়ত, এই পর্যায়ে গোটা দেশের একমাত্র এই একটি লোকসভা কেন্দ্রেই উপনির্বাচন করতে হচ্ছে। বাকিগুলিতে বিধানসভার উপনির্বাচন। তার ফলে একই দিনে সব ক’টি কেন্দ্রের নির্বাচন সেরে ফেলার যুক্তিও খাটছে না বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই বিষয়গুলিই নির্বাচন কমিশনকে বিস্তারিত ভাবে জানাতে চলেছে রাজ্য সরকার। তবে কমিশন কী করবে, তা নিয়ে এখনই কোনও ধারণা মহাকরণের নেই।
পাশাপাশি, দল হিসেবেও তৃণমূল বিষয়টিকে ‘ভাল ভাবে’ নিচ্ছে না। ভোটের দিন ক্ষণ স্থির করার পিছনে ‘রাজনীতি’ রয়েছে বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় দলের তরফে বিষয়টি নিয়ে কমিশনের কাছে যেমন যাবেন, তেমনই ‘যথোপযুক্ত রাজনৈতিক জায়গায়’ দরবারও করবেন। দলের একাংশের অভিমত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন মমতা। ১২ অক্টোবর সাংসদ পদে মমতার ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচনের জন্য হাতে অন্তত আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় রয়েছে। তা হলে, এই ‘অনাবশ্যক’ তাড়াহুড়ো কেন? দলের ক্ষোভ আরও একটি বিষয় নিয়েও কেন এত দ্রুত ভোট করে মানুষের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটানো হচ্ছে? তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “মে মাস থেকে মানুষ ক্রমাগত ভোট দিয়েই যাচ্ছেন! তাঁদের কি কোনও রেহাই নেই? আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভোট হলে কী ক্ষতি হত!” এমনকী, শাসক দলের একাংশের দাবি, ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কলকাতায় ভোট হবে বলে তাঁদের একটা ‘ধারণা’ দেওয়া হয়েছিল। এ দিনের ঘোষণায় তা-ও ধাক্কা খেল।
প্রধান বিরোধী দল সিপিএম অবশ্য মনে করছে, ৩০ তারিখের উপনির্বাচন নিয়ে আপত্তি তোলার কোনও ‘নৈতিক অধিকার’ মমতা বা তাঁর দলের নেই। কারণ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সাংসদ পদে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন বলেই এই উপনির্বাচন করতে হচ্ছে। বিধানসভা ভোটের আগে লোকসভায় ইস্তফা দিয়ে মমতা সরাসরি ভোট লড়লে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পরে সাংসদ পদে ইস্তফা দেওয়ায় নির্বাচনের নির্ঘণ্টও সেই ভাবে স্থির করতে হচ্ছে। ফলে যদি উন্নয়নের কাজ থমকে যায়, তার জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী নিজেই।
এই পরিস্থিতিতে এখন দেখার, রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের যৌথ উদ্যোগে কমিশন সাড়াদেয় কি না। |
|
|
|
|
|