এ বছর তিন বার দাম বেড়েছে পেট্রোলের। দু’সপ্তাহের মধ্যে বাড়তে পারে আবার। শুধু তাই নয়, রান্নার গ্যাসের দামও ঘুরপথে বাড়ানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এই জোড়া ধাক্কার অশনি সঙ্কেতে বিজেপি দুষছে ‘অথর্নীতিবিদ’ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। অস্বস্তিতে কংগ্রেস দায় চাপাচ্ছে তেল সংস্থাগুলির উপরে। আর তেল সংস্থাগুলির দাবি, ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমে যাওয়াতেই পেট্রোলের দাম বাড়ানোর কথা ভাবতে হচ্ছে। যার সত্যতা স্বীকার করছেন খোদ পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীও।
হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেডের অধিকর্তা বি মুখোপাধ্যায় আজ বলেন, “এই মুহূর্তে প্রতি লিটার পেট্রোলে ১ টাকা ৫০ পয়সা লোকসান হচ্ছে তেল সংস্থাগুলির। সেই লোকসান পোষাতে স্থানীয় লেভি-সহ খুচরো দাম লিটারে ১ টাকা ৮২ পয়সা বাড়ানো প্রয়োজন। এ নিয়ে বাকি তেল সংস্থাগুলির সঙ্গেও আলোচনা চলছে।” দু’সপ্তাহের মধ্যেই এই বর্ধিত দাম কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছে তেল সংস্থাগুলি।
পাশাপাশি, পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি কমাতে পরিবারপিছু রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সীমা বেঁধে দিতে চাইছে কেন্দ্র। যার জেরে পরোক্ষে বেশি দাম দিতে হবে গ্রাহকদের। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি ও যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছেন, যাতে বছরে পরিবারপিছু ৬টির বেশি সিলিন্ডারে ভর্তুকি দিতে না হয়। বর্তমানে সিলিন্ডার প্রতি ২৭০ টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। নয়া নীতি হলে, এক-একটি পরিবার বছরে সর্বাধিক ৬টি সিলিন্ডারে ভর্তুকি পাবে। তার বেশি নিতে হলে বাকিগুলির জন্য বর্তমান দামের সঙ্গে দিতে হবে ভর্তুকির ওই ২৭০ টাকাও। জয়পালের যুক্তি, “ভর্তুকির সুবিধা যাতে শুধু গরিবদের কাছেই পৌঁছয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা নিতে চাইছে সরকার। গরিবদের জন্য রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনও অভিপ্রায় নেই কেন্দ্রের। কিন্তু সিলিন্ডারের সীমা বেধে দেওয়া হতে পারে।” প্রশ্ন উঠছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে তিন-তিন বার পেট্রোলের দাম বাড়ানোর পরে ফের কোপ দেওয়ার যুক্তি কী? বিশেষত আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল পাওয়া যাচ্ছে প্রতি ব্যারেল ১০৮ ডলারে। মাস কয়েক আগে অঙ্কটা যখন একশোর নিচে নেমেছিল, তখন কিন্তু পেট্রোলের দাম কমানো হয়নি! তেল সংস্থাগুলির যুক্তি, এ ক্ষেত্রে চাপটা আন্তর্জাতিক বাজারের নয়। টাকার অবমূল্যায়নের জন্যই আমদানির খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীরও বক্তব্য, তিন মাস আগে এক ডলারের দাম ছিল ৪৬ টাকা। এখন তা ৪৯ টাকা। শুধু এর জন্যই বছরে লোকসান দাঁড়াবে ২৪ হাজার কোটি টাকা।
গত বছর পেট্রোলের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়েছে সরকার। দাম বাড়ানোর আগে তবু সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয় তেল সংস্থাগুলি। কিন্তু ডিজেল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের দাম ঠিক করে সরকারই। এই তিনটির জন্য তেল সংস্থাগুলির প্রতি দিন ৩৩৩ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির ‘লোকসান’-এর বহর দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। গত আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে অর্থ মন্ত্রকের কাছ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি না পাওয়ায় পরিস্থিতি শোচনীয় হয়েছে আরও। এই অবস্থায় পেট্রোলের দাম না বাড়িয়ে কোনও উপায় নেই বলেই মনে করছে তেল সংস্থাগুলি।
ফের পেট্রোলের দাম বাড়ার ইঙ্গিত পেয়ে বিজেপি এখন থেকেই মনমোহন সিংহ সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা শুরু করেছে। বিজেপি-র মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন বলেন, “এত দিন আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামের দোহাই দিত সরকার। কিন্তু এখন টাকার দাম পড়ে যাওয়াকে সামনে রেখে তেলের দাম বাড়ানোর যুক্তি সাজানো হচ্ছে। এ তো সরাসরি অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহের ব্যর্থতা। ভুল আর্থিক নীতির জন্যই দেশের অর্থনীতিকে খেসারত দিতে হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির হার যখন দশ শতাংশের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে, সেই সময় আম-আদমির উপর বোঝা চাপানোর পথে হাঁটছে কেন্দ্র।” খাদ্য সুরক্ষার মতো আইন করে ও সামাজিক প্রকল্পগুলির রূপায়ণের গতি বাড়িয়ে সরকার যখন জনতার সমর্থন ধরে রাখতে তৎপর, তারই মধ্যে তেলের দাম বাড়ানোর প্রশ্নে চাপে কংগ্রেসও। গোটা দায় তারা তেল সংস্থাগুলির দিকে ঠেলতে চাইছে। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির কথায়, “দাম বাড়ানো নিয়ে আলোচনার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে পারবে তেল সংস্থাগুলিই।” |