আলো ফুটতেই বাবা রিকশা ভ্যান টেনে বাড়িতে বাড়িতে গ্যাস সিলিণ্ডার পৌঁছে দেন। মা গৃহবধূ। রায়গঞ্জের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শিসগ্রামের এমন এক পরিবারের ছেলে বিশ্বজিৎ সরকার ‘টাটা বিল্ডিং ইন্ডিয়া’ স্কুল ভিত্তিক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দেশে প্রথম স্থান দখল করল। রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রের সাফল্যে খুশির আবহ রায়গঞ্জ শহর জুড়ে। সোমবার স্কুল তাকে সংবর্ধনা দেয়। গত ১২ অক্টোবর দিল্লির তাজ হোটেলে টাটা কর্তৃপক্ষের তরফে শংসাপত্র, স্মারক ও ল্যাপটপ দিয়ে দেশ সেবার সম্মান জানানো হয়। তার বিষয় ছিল---২০১৬ সালের অলিম্পিকে ২০টি সোনার পদক পেতে হলে ভারতবর্ষকে কী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীলমাধব নন্দী বলেন, “দরিদ্র পরিবার থেকে পরিশ্রম করে দেশ সেরা হয়ে স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। টাকার অভাবে ওর লেখাপড়ায় যেন ক্ষতি না-হয় সেটা দেখব।” পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “শুধু স্কুল নয়। ও জেলার গৌরব। ওর পরিবারের পাশে আমরা থাকব।” |
ছেলের সাফল্যে খুশি হলেও শেষ পর্যন্ত লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারবেন কি না সেটা ভেবে দিশেহারা বিশ্বজিতের বাবা বিষ্ণুবাবু। তিনি বলেন, “ছেলেটা অনেক দূর পড়তে চায়। জানি না ইচ্ছা পূরণ করতে পারব কি না।” দেড় বছর আগে জেলা ভিত্তিক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন স্কুলের মধ্যে সেরা হয় বিশ্বজিৎ। টাটা কর্তৃপক্ষ ওই সময় তাকে ভিডিও ক্যামেরা, শংসাপত্র ও স্মারক দিয়ে পুরস্কৃত করে। গত মার্চ মাসে দিল্লিতে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় সে। এর পরে জাতীয় প্রতিযোগিতায় দিল্লিতে অংশ নিয়ে সেরার সাফল্য। কী ভাবছে বিশ্বজিৎ! সংক্ষিপ্ত উত্তর “ভাল লাগছে।” তার লেখা প্রবন্ধের সারমর্ম কী? দেশ সেরা ছাত্র জানায়, সে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে। তার মধ্যে একটি হল ২০১৬ সালে অলিম্পিকে ভারতকে ২০টি সোনার পদক পেতে হলে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারকে যৌথ ভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পিছিয়ে থাকা খেলোয়াড়দের উন্নত মানের প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন প্রচুর খেলোয়াড় রয়েছে যারা অভাবের জন্য খেলার নানা দামি সরঞ্জাম কিনতে পারে না। অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ওই খেলোয়াড়দের তুলে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। |