চিকিৎসকের অভাবে ব্যাহত পরিষেবা
প্রায়ই শোনা যায় উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে চিকিৎসা পরিষেবা মেলে না। কিন্তু সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে তার উল্টো ছবি লক্ষ্য করা গেল। সেখানে পরিকাঠামো আছে। কিন্তু উপযুক্ত চিকিৎসক নেই। যার ফলে কোনও অস্ত্রোপচার হয় না এই হাসপাতালে। অথচ খাতায় কলমে এই গ্রামীণ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ‘সিজার’ হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। বাস্তবে সিজার-সহ কম বা বেশি সিরিয়াস রোগী এলেই সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে সাঁইথিয়া ব্লক প্রাথমিক হেলথ সেন্টারকে (বিপিএইচসি) গ্রামীণ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঘটা করে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র। তার কিছু দিন পর থেকেই হাসপাপাতালের সংস্কারের কাজ শুরু হয়। তিনতলা নতুন অন্তর্বিভাগ, অস্ত্রোপচারের ঘর প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়। একই সঙ্গে বহির্বিভাগের চেহারাও পাল্টে যায়। কিন্তু যে কারণে এত কিছু করা হল বাস্তবে স্থানীয় বাসিন্দারা সেই পরিষেবা থেকে এখনও বঞ্চিত রয়েই গিয়েছেন।
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়া বিপিএইচসি বহু পুরনো। দীর্ঘদিন ধরেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ৬০টি শয্যা আছে। সাঁইথিয়া এলাকার রোগী ছাড়াও ময়ূরেশ্বর, লাভপুর এলাকার একাংশ এই বিপিএইচসির উপরে নির্ভরশীল ছিলেন। ২০০৩ সালে গ্রামীণ হাসপাতাল ঘোষণার পরে বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগটি পুরনো ভাঙাচোরা ভবন থেকে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়। স্বাভাবিক ভাবে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল মানুষের চাহিদাও বেড়ে যায়। কিন্তু গ্রামীণ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করার পরে ৮ বছর কেটে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, চিকিৎসক থেকে কর্মী এমনকী শয্যা সংখ্যাও বাড়েনি। ফলে গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো অনুযায়ী গড়ে ওঠা অপারেশন থিয়েটার ও যন্ত্রপাতি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এখানে ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা। বাস্তবে এক জন শিশু বিশেষজ্ঞ-সহ ৬ জন আছেন। যাঁর মধ্যে এক জন চিকিৎসককে মাঝে মধ্যে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বিএমওএইচকে নিয়ে বর্তমানে চিকিৎসকের সংখ্যা ৫। এ ছাড়া, এক জন অতিরিক্ত মেডিক্যাল অফিসার ও এক জন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক আছেন। দীর্ঘদিন হল দাঁত ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের বদলি হয়ে গিয়েছে। তার পর থেকে ওই দু’টি বিভাগ কার্যত বন্ধ। মাত্র এক জন দাঁতের চিকিৎসক সপ্তাহে মাত্র দু’দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য আসেন এবং চলে যান।
এ তো গেল চিকিৎসকদের হিসেব। গ্রামীণ হাসপাতালে যে সংখ্যক অস্থায়ী নার্স বা কর্মী থাকার কথা তা নেই। হিসেব মতো ১৮ জন নার্স বা কর্মী থাকার কথা। আছে ১২। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থাকার কথা ২৪, আছে ১৭ জন। ফার্মাসিস্ট দু’জনই আছে। এক জনও স্টোর কিপার নেই। সুইপার ১০ জনের জায়গায় ৬ জন আছেন। ওয়ার্ড মাস্টার নেই। কিন্তু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে ৮০০-র বেশি রোগী বহির্বিভাগে আসেন। অন্তর্বিভাগেও দিন দিন চাপ বাড়ছে। বিএমওএইচ সুজয় পাল বলেন, “চিকিৎসক নিয়ে সমস্যা তো আছে। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও অজ্ঞান করার চিকিৎসক না থাকায় সমস্ত সিজার বা সিরিয়াস রোগীদের বাধ্য হয়ে সিউড়িতে পাঠাতে হয়। এ ছাড়া, সমস্ত স্তরের কর্মী কম থাকার জন্য অনেক সময় পরিষেবার ঘাটতি হয়।”
জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিক বলেন, “চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীর অভাবের জন্য সব কিছু সময় মতো বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে না। মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে চরম সমস্যা দেখা দেওয়ায় এক জন চিকিৎসককে ডেপুটেশনে নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এটা করতেই হয়। আশা করছি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শীঘ্রই পাওয়া যাবে। চেষ্টা চলছে এই আর্থিক বছরের মধ্যেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও অজ্ঞান করার চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.