এত দিন ছিল না। কিন্তু হয়েও কাজে এল না।
স্রেফ জেনারেটর বসানো নিয়ে ঠিকাদারদের করা মামলার জটে আটকে গেল হাওড়া জেলা হাসপাতালে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়া সদ্যোজাতদের চিকিৎসা বিভাগের কাজ। ফলে, তিন মাস আগে এই বিভাগটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা করা যায়নি। প্রতি মাসেই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের তারিখ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ার একমাত্র জেলা হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও সেখানে এত দিন পর্যন্ত সদ্যোজাত শিশুদের জন্য আলাদা কোনও বিভাগ বা ‘নিওনেটাল ইউনিট’ ছিল না। ফলে, অসুস্থ সদ্যোজাতদের যথাযথ চিকিৎসা ওই হাসপাতালে পাওয়া যেত না। তাই সদ্যোজাতদের মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটত ওই হাসপাতালে। সেখানকার অসুস্থ শিশুদের কলকাতার সরকারি শিশু হাসপাতালে ‘রেফার’ করার সংখ্যাও ছিল প্রচুর।
বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই ওই হাসপাতালে এই বিভাগ চালু করার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর অনুমোদন দেয়। অর্থও মঞ্জুর হয়ে যায়। সেই মতো হাসপাতালের সুরেন্দ্রনাথ দাস বিল্ডিং-এর তিনতলায় একটি অংশের সংস্কার করে সেখানে ওই বিভাগটি তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের মে মাসে। |
লিফট বন্ধ। পাঁজাকোলা করে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওপরে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
টানা তিন দিন ধরে বিকল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে। চূড়ান্ত ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা। স্ট্রেচার কাঁধে রোগীকে নিয়ে উঠতে হচ্ছে দো’তলা ও তিনতলায়। হাসপাতালের সুপার রামনারায়ণ মাইতি বলেন, “ডব্ল্যুবিআইডিসি চারতলা ভবনটি তৈরি করেছে। লিফট দেখভালের কথা তাঁদের। যে ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করিয়েছে, তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু ‘আসছি-আসব’ বলে তারা তা ঠিক করছে না। রোগীদের সমস্যা হচ্ছে জেনেও আমরা কিছুই করতে পারছি না।”
নতুন ভবনের দো’তলা ও তিনতলা জুড়ে রয়েছে জেনারেল মেডিসিন ওয়ার্ড। সেখানেই রোগীর চাপ বেশি। গুরুতর অসুস্থ রোগী বা বয়স্কদের পক্ষে সিঁড়ি ভেঙে ওঠা কঠিন। লিফট বিকল থাকায় সেই কঠিন কাজই করতে হচ্ছে তিন দিন ধরে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, লিফট চালানো ও দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে ডব্ল্যুবিআইডিসির। কিন্তু গোড়ায় লিফট চালুর ব্যাপারে তারা কোনও ব্যবস্থা করে। |
ইতিমধ্যে রোগীর চাপে নতুন ভবনে মেডিসিন ওয়ার্ড চালু করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। লিফট চালানোর ব্যবস্থাও করতে হয়েছে। এ জন্য একজনকে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হয়। হাসপাতাল সুপার বলেন, “বিভিন্ন তহবিল থেকে লিফট চালানোর জন্য কর্মীকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। সে ভাবেই চলছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লে আমরা কী করব? আমররা মেরামত করলে টাকা কে দেবে? আমাদের তো কোনও তহবিল নেই। তাই ঠিকাদার সংস্থাকে জানিয়েছি।”
আর এই টানাপোড়েনে ভুগছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। এমনিতেই হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কম। বেশিরভাগ সময়ই রোগীর আত্মীয়দের স্ট্রেচার বইতে হয়। এখন তো স্ট্রেচার নিয়ে সিঁড়িও ভাঙতে হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষা, ইউএসজি, স্ক্যান-সহ নানা প্রয়োজনে রোগীকে ওয়ার্ডের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। রোগীকে নিয়ে যেতে হয় অন্য ভবনে। লিফট না থাকায় এই কাজে তীব্র ভোগান্তি হচ্ছে রোগীর পরিজনেদের। এক রোগীর আত্মীয় বলেন, “ভর্তির সময় বাড়ির সকলে এসেছিলাম। এখানতার পরিস্থিতি দেখে সকলেই তিনদিন ধরে রয়েছি। সবাই মিলে না থাকলে তো স্ট্রেচার বয়ে ওপরে নিয়ে যাওয়া যাবে না।” |