জলপাইগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে ১ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা সেতুতে প্রতি পদে বিপদের আশঙ্কা। অসংখ্য ছোট বড় গর্ত। একই অবস্থা ধূপগুড়ির কাছে থাকা জলঢাকা সেতুর। রোজই দুর্ঘটনা ঘটছে। গর্তে পড়ে বিকল হচ্ছে গাড়ি। ওই দুটি সেতুই জাতীয় সড়কের উপরে রয়েছে। তা সারানোর দায়িত্ব জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বহুবার বিষয়টি জানিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরুর কথা বলা হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, মাস তিনেক আগে মেরামতির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। তার পরেও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেনি। অবশেষে সোমবার সেতু মেরামতির কাজে নামল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এদিন সকাল থেকেই সেতু মেরামতির কাজ শুরু হয়। এর আগে গত সপ্তাহে তিস্তা সেতুর রেলিং মেরামতের কাজ শুরু হয়। তিনদিনের মাথায় সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সেতু মেরামতির নির্দেশ পাঠানোর পরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে কাজে নামায় বিভিন্ন মহল থেকে স্বস্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এদিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সকাল থেকে সেতুর মেরামতির কাজ শুরুর ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। |
রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় এবং এসজেডিএ-র সদস্য চন্দন ভৌমিককে সেতুর কাজ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে যান। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তিস্তা সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেতুর কাজ যাতে দ্রুততার সঙ্গে সেরে ফেলা হয় সেই ব্যাপারে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।” পুরোদমে সারানোর কাজ শুরু হলে যাতে যান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে রাজ্য বাড়তি নজরদারি করে সেই ব্যাপারেও সাহায্য চেয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এদিন মেরামতির কাজের দায়িত্বে থাকা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের পরামর্শদাতা সংস্থার আধিকারিক অমিত কিরণ বলেন, “শ্রমিক সমস্যা-সহ নানা সমস্যার কারণে মেরামতির কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে এখন থেকে দিনরাত কাজ হবে। ৯০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।” এদিন সকালে পরিদর্শনে গিয়ে রাজগঞ্জের বিধায়ক তথা ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও এসজেডিএ-র সদস্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে ফোনে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানান, সেতুর ওপরে ৬ ইঞ্চি পিচের চাদর ভেঙে ফেলে প্রথমে সিমেন্ট ও পাথরের টুকরো বিছানো হবে তার ওপরে আধুনিক পদ্ধতিতে পিচের প্রলেপ দেওয়া হবে। জাতীয় সড়ক কতৃপক্ষের কাজের ধরণে এ দিন পরিদর্শনে আসা দুই তৃণমুল নেতা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। সেতু মেরামতি নিয়ে তারা বেশ কয়েকটি সংশয় তুলে ধরেন। প্রথমত সেতুর মাঝ বরাবর এলাকা থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। কাজ শুরু হলেও জেলা প্রশাসনকে কিছু জানানো হয়নি। ফলে সেতুতে যান নিয়ন্ত্রণ না করায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান খগেশ্বরবাবু বলেন, “দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছি। বারবার বলে আসার পরেও এত দেরিতে কাজ শুরু হয়েছে। এত বড় গুরুত্বপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে দিনে কয়েক হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। তাতে মেরামতির কাজ শুরু হলেও জাতীয় সড়ক কতৃপক্ষ পুলিশ বা জেলা প্রশাসনকে কিছু জানায়নি। আমি নিজেই ফোন করে পুলিশকে যানজট নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে বলেছি।” পরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হয়। মেরামতির জন্য সেতুর ওপরে পিচের চাদর তুলে ফেলা ভারী যানবাহন চলাচল করার সময় সেতুটি বিপজ্জনক ভাবে দুলছে। সেতুর মূল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সেতুতে যানের চাপ থাকায় মেরামতিতে বিঘ্ন ঘটছে। |