তরাই-ডুয়ার্সের সামান্যতম অংশও জিটিএ-এর আওতায় আনার বিরোধিতা আগেই করেছিল জলপাইগুড়ি জেলা বামফ্রন্ট। এবার সদ্য প্রস্তাবিত জিএটিএ-এর আওতায় তরাই-ডুয়ার্সের এতটুকু জায়গাও অর্ন্তভুক্ত হতে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিল বামফ্রন্ট। জিটিএ তথা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আওতায় ডুয়ার্স ও তরাইয়ের অর্ন্তভুক্তিকরণের বিষয়ে সমীক্ষাকারী উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে প্রস্তাব বা প্রতিবাদ পেশ করার জন্য সোমবারই ছিল শেষ দিন। সে কারণে এদিন উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সদস্য তথা জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্রের কাছে জেলা বামফ্রন্ট তাদের লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়। ঘটনাচক্রে রবিবারই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের একাংশ নেতৃবৃন্দ বৈঠক করে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দেন, জিটিএর পরিবর্তে জিএটিএ বা গোর্খাল্যান্ড আদিবাসী টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গঠন করার প্রস্তাব রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়। রবিবারের এই ঘটনায় মোর্চার সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের জিটিএ গঠনের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি ‘ভঙ্গ’ হয়েছে বলে জলপাইগুড়ি জেলা বামফ্রন্ট মনে করে। |
জেলা বামফ্রন্টের তরফে জেলাশাসককে তাদের বক্তব্য জমা দেওয়ার পরে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম বলেন, “মোর্চার সঙ্গে জিটিএ নিয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল। আর রবিবার মোর্চার পক্ষ থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জিটিএর পরিবর্তে জিএটিএ গঠন করা হোক। তার ফলে চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে। আবার নতুন করে আশঙ্কা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।” পাহাড় নিয়ে বামফ্রন্টের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে জিয়াউল আলম বলেন, “কয়েক শতক ধরে জলপাইগুড়ি জেলা সহ তরাই ডুয়ার্সে সব জাতি ভাষার সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে রয়েছেন। ভৌগোলিক কারণে পাহাড়ের তিন মহকুমাকে স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার বিষয়টি আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সমর্থন করছি। কোনও ভাবেই তরাই বা ডুয়ার্সের কোনও এলাকাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।” জিটিএ পুর্নগঠনের যে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে তাতে রাজ্য সরকারের ভুমিকার সমালোচনা করে মহকুমা ভিত্তিক সমীক্ষার পরিবর্তে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর থেকে সমীক্ষা শুরুর দাবি জানিয়েছে বাম দলগুলি। সমতলকে জিটিএর অর্ন্তভুক্তির বিরোধিতা-সহ আদিবাসী বিকাশ পরিষদ ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ বলে বামফ্রন্টের পক্ষে জানানো হয়েছে। বামদলগুলির প্রতিনিধি দলের নেতা জিয়াউল আলম বলেন, “আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি। রবিবার বৈঠকের পর বোঝা গেল মোর্চা আর বিকাশ পরিষদ আসলে একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।” বামেদের প্রতিনিধি দলে জিয়াউল আলম ছাড়াও সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সলিল আচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের অঞ্জন বন্দোপাধ্যায়, গোবিন্দ রায়, প্রবাল রাহা, আরএসপির দেবব্রত ঘোষ, প্রকাশ রায়-সহ অনান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদিনই জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের কাছে অন্য একটি বিষয়ে দেখা করতে যান আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদ রায়। তিনি বলেন, “রবিবার মোর্চা-পরিষদ যে বৈঠকে জিএটিএর যে প্রস্তাব উঠে এসেছে, তাতে পরিষদের যে নেতারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কথা তাদের সংগঠন সমর্থন করে কি না সেটাই দেখার বিষয়। তা ছাড়া তরাই ডুয়ার্সের সংযুক্তি নিয়ে ২২টি সংগঠনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাও বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছেন। সুতরাং এখানেই সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি।” পঞ্চম তফশিলই পাহাড়ে এবং ডুয়ার্স-তরাইয়ের জন্য একমাত্র সমাধান বলে দেবপ্রসাদবাবু এদিন ফের জানিয়েছেন। একই দিনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ভক্তিনগর ব্লক কমিটির তরফ থেকেও জিটিএর এলাকা নিয়ে তাদের মত হাই পাওয়ার কমিশনের সদস্য জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের কাছে জমা দেওয়া হয়। |