|
|
|
|
ইংরেজি বলার পাঠ পঞ্চমেই |
মমতার সায়, তবে গ্রেডের উচ্ছেদই প্রশ্নের মুখে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পাঁচ বছর আগে, বামফ্রন্টের আমলে গ্রেড চালু হয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিকে। সেই ব্যবস্থা তুলে দিয়ে নম্বর ব্যবস্থায় ফিরে যাচ্ছে রাজ্যের নতুন সরকার। আগামী বছর থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে গ্রেডের বদলে শুধু নম্বর দেওয়া হবে। গ্রেড ব্যবস্থায় মার্কশিটে মোট নম্বর দেওয়া হত না। এ বার মোট নম্বরের উল্লেখও থাকবে। সেই সঙ্গে সব সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি থেকে ইংরেজিতে কথা বলার পাঠও শুরু হচ্ছে আগামী বছর থেকে। এই বিষয়ের পরীক্ষাও নেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
গত ২৪ অগস্ট উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বৈঠকে পরীক্ষায় মোট নম্বর ফেরানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। তার পরে আর কিছুই এগোয়নি। সোমবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে শিক্ষা নিয়ে এক বৈঠকে সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি তোলেন। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নীতিগত ভাবে উচ্চ মাধ্যমিকে গ্রেড প্রথার বদলে নম্বর প্রথা ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। তবে মাধ্যমিকে কী হবে, তা নিয়ে এ দিনের বৈঠকে কোনও আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি।
ছাত্রছাত্রীদের উপরে চাপ কমানোর জন্য পাঁচ বছর আগে উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয়-ভিত্তিক নম্বর ও গ্রেড দেওয়ার প্রথা চালু হয়। তার পর থেকে মার্কশিটে মোট নম্বরের উল্লেখও থাকে না। দেশের প্রায় সব বোর্ডেই এই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হয়। স্কুল বোর্ডগুলির সংগঠন ‘কবসে’র সিদ্ধান্ত ছিল নম্বর থেকে ক্রমাগত গ্রেডের দিকে যাওয়া। কারণ, সকলেই মেনে নিয়েছিল, দু’-এক নম্বরের ব্যবধানে পড়ুয়াদের মধ্যে মেধার ফারাক করাটা শিক্ষাবিজ্ঞানসম্মত নয়। এখন গ্রেডের সঙ্গে নম্বর থাকলেও ভবিষ্যতে কেবল গ্রেড রেখে নম্বর সরিয়ে দেওয়াটাই লক্ষ্য। তা হলে হঠাৎ পিছনে হেঁটে উচ্চ মাধ্যমিকে গ্রেডের বদলে নম্বর চালু করার কারণ কী?
সংসদের সভাপতি সোমবার এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সরকারি সূত্রের খবর, এতে এক দিকে মূল্যায়ন পদ্ধতিকে সহজ এবং সাধারণের বোধগম্য করতে সুবিধা হবে। অন্য দিকে, মেধা-তালিকা তৈরির ক্ষেত্রেও জটিলতা কমবে। সেই জন্যই নম্বরে ফিরতে চাইছে রাজ্য সরকার। তা ছাড়া গ্রেড দেওয়া হলেও এখনও কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত নম্বরই প্রাধান্য পায়। সেটাও সরকার বিবেচনায় রেখেছে।
রাজ্য সরকারেরই গড়া স্কুল পাঠ্যক্রম কমিটিতেই কিন্তু এই ব্যাপারে মতভেদ আছে। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য মর্মর মুখোপাধ্যায় মনে করেন, গ্রেড ব্যবস্থাই বৈজ্ঞানিক। তাঁর কথায়, “গোটা পৃথিবী গ্রেডের দিকে চলেছে। এ দেশের অন্যান্য রাজ্যও সেই দিকেই এগোচ্ছে। এখন নম্বরে ফিরে গেলে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীরা অসুবিধায় পড়বে।” ওই কমিটিরই আর এক সদস্য সুনন্দ সান্যাল অবশ্য মনে করেন, বামফ্রন্টের আমলে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই গ্রেড ব্যবস্থা চালু করে দেওয়া হয়েছিল। তবে গোটা দুনিয়া যে গ্রেডের দিকেই চলেছে এবং শেষ পর্যন্ত যে ওই দিকেই যেতে হবে, সুনন্দবাবুর মনেও সেই বিষয়ে কোনও ধন্দ নেই। পবিত্র সরকারের মতে, সাহসের অভাবেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, “ছাত্র-অভিভাবক সকলেই ধীরে ধীরে গ্রেড ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিলেন। এর বিরুদ্ধে কোনও আন্দোলন হতেও দেখা যায়নি। তবু সরকার গ্রেড তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং তা-ও কোনও আলাপ-আলোচনা, তর্কবিতর্ক ছাড়াই।”
এ দিকে, পঞ্চম শ্রেণি থেকে স্কুলে ইংরেজিতে কথা বলার ক্লাস চালু করার সিদ্ধান্তও ‘বৈপ্লবিক’ বলে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে সরকারের অন্দরে। কারণ, বামফ্রন্ট জমানায় জ্যোতি বসুর সরকার প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়ার ফলে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা দীর্ঘদিন যে-ভাবে ঘা খেয়েছে, ইংরেজি ফিরিয়ে আনার পরেও সেই ক্ষত পুরোপুরি সারেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তাই পঞ্চম শ্রেণি থেকে ইংরেজিতে কথা বলা শিখিয়ে স্কুল স্তর থেকেই পড়ুয়াদের বৃহত্তর ক্ষেত্রের জন্য ‘তৈরি’ করে দিতে চায়। এমনই বক্তব্য মহাকরণের।
মেডিক্যালের জয়েন্টেও রাজ্য স্তরে পরীক্ষা হলে তার প্রশ্নপত্র ইংরেজিতে করা হতে পারে। সোমবারের বৈঠকে এই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিক্যালে স্নাতক স্তরে ছাত্র ভর্তি করা হবে। সরকার জানতে পেরেছে, রাজ্য স্তরে এই পরীক্ষা নেওয়া যাবে কি না, সে-ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা আছে। বিষয়টি তাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্য স্তরে মেডিক্যাল জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ক্ষেত্রে যদি কোনও আইনি বাধা না-থাকে, তা হলে আগামী শিক্ষাবর্ষেই ইংরেজি প্রশ্নপত্রে এই পরীক্ষা হবে। |
|
|
|
|
|