যুব কংগ্রেস নেতা খুনে জড়িতদের ধরতে সিআইডি তদন্তের দাবি তুলল দলের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। দলেরই কিছু লোক এই ঘটনায় যুক্ত বলে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ।
গত ২০ অক্টোবর বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাটের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন করা হয় দেবকুমার অধিকারী নামে ওই যুব কংগ্রেস নেতাকে। তিনি আটুরিয়া পঞ্চায়েতের সদস্যও ছিলেন। দলেরই একাংশ এই ঘটনায় জড়িত বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে। বাদুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা কংগ্রেস নেত্রী ইতি ধাবক বলেন, “দেবকুমারকে খুনের ঘটনায় জড়িত দলেরই অন্য একটি গোষ্ঠী। আমরা তাদের চরম শাস্তি দাবি করছি।”
তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে আরও কয়েক জনের সন্ধান মিলেছে। বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “ধৃতদের জেরা করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত চলছে। আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। খুব শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে।” |
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্থানীয় পঞ্চায়েতে সম্প্রতি অনাস্থা আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল দেবকুমারবাবুর। এতে দলের একাংশের বিরাগভাজন হন তিনি। পঞ্চায়েতের কিছু টেন্ডার নিয়েও দু’পক্ষের বনিবনা হচ্ছিল না। দেবকুমারবাবুর প্রতিবাদের মুখে এলাকায় তোলাবাজিতে সমস্যা হচ্ছিল কিছু দুষ্কৃতীর। তদন্তকারী অফিসারেরা নিশ্চিত, অতি পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা করতেই ঘটনার রাতে গ্রামের আমবাগানে গিয়েছিলেন ওই যুবক। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল চার দুষ্কৃতী। মোটা টাকার বিনিময়ে ভাড়া করা হয়েছিল তাদের। খানিক ক্ষণ খাওয়া-দাওয়া, গল্পগুজবের পরে খুব কাছ থেকে দেবকুমারবাবুকে গুলি করে ওই দুষ্কৃতীরা। পুলিশের দাবি, আততায়ীদের নিজের বাইকে করে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন সেলিম খান। সেখানে অপেক্ষায় ছিল গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত এক দুষ্কৃতী মাহাবুর গাজি। সে-ই সকলকে সীমান্ত পার করিয়ে দেয়। এই দু’জনেই ধরা পড়েছে পুলিশের জালে।
দেবকুমারবাবুর পরিবারকে সোমবার ব্যক্তিগত ভাবে আর্থিক সাহায্য করেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস নেতা সম্রাট তপাদার। নিহত কংগ্রেস নেতার বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত। মা-ও ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দেন ওই কংগ্রেস নেতা। নিহত কংগ্রেস নেতার মা কল্যাণীদেবী বলেন, “দলের জন্য ছেলেটা খুব ভাবত। অথচ, ওর মৃত্যুর পরে আমরা কেমন আছি, তা দেখার প্রয়োজন মনে করলেন না দলের বড় নেতারা।” সম্রাটবাবুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। সম্রাটবাবু বলেন, “আমাদের দাবি, প্রকৃত অপরাধীরা গ্রেফতার হোক। পুলিশ তা না করায় মহকুমাশাসকের কাছে আমরা সিআইডি তদন্তের দাবি করেছি। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও সেই দাবি জানানো হবে।”
নিহত দেবকুমারবাবুর বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে আর্থিক সাহায্য। |