খাতা কিনতে বেরিয়েছিল সাত বছরের মারিয়া খাতুন। ফেরার পথে ইট-বোঝাই একটি ম্যাটাডর ধাক্কা মারে তাকে। কলকাতার হাসপাতালে পাঠানোর পথে মৃত্যু হয় ওই বালিকার। সোমবার সকালে বাদুড়িয়ার পূর্ব বেনা গ্রামে এই ঘটনার জেরে ম্যাটাডর চালককে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা। গাড়িটিতে ভাঙচুর চালানো হয়। গ্রামের রাস্তা দিয়ে প্রচুর ভারি গাড়ি যাতায়াতের ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। এ দিনের দুর্ঘটনার প্রতিবাদে প্রায় সাত ঘণ্টা ওই রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত মারিয়া। উৎসবের ছুটি শেষ হয়েছে রবিবার। সোমবার স্কুলের প্রথম দিন। অঙ্ক খাতা শেষ হয়ে যাওয়ায় মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সকাল ৭টা নাগাদ খাতা কিনতে বেরিয়েছিল সে। ফেরার পথে চা কিনতে বলেছিলেন মা। বাড়ির সামনেই রাস্তার উল্টো দিকে দোকান। এক দিকে বাদুড়িয়া অন্য দিকে কেওটশা এবং মগরা। তিন রাস্তার মোড়ের দোকান থেকে সবে মাত্র বেরিয়েছে মারিয়া। সে সময়ে বাদুড়িয়ার দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি ম্যাটাডর ছোট্ট মেয়েটিকে ধাক্কা মারে।
প্রতিবেশীরা রক্তাক্ত মেয়েটিকে দ্রুত নিয়ে যান বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতায়। পথেই মারা যায় মেয়েটি। |
এ দিকে, দুর্ঘটনার পরেই এক দল লোক ম্যাটাডরটিকে আটকায়। চালককে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে চালককে। গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই মেয়েটির মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছতে উত্তেজনা ছড়ায়। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি, বাঁশ ফেলে শুরু হয় অবরোধ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ঘণ্টা সাতেক অবরুদ্ধ ছিল কেওটশা-মগরা রাস্তা।
মারিয়ার বাবা মিকাইল মণ্ডল রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মারিয়ার মা-সহ অন্য আত্মীয়-প্রতিবেশীরা। সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। মৃত্যুসংবাদ পেয়ে মারিয়ার স্কুলেও এ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, “গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রচুর ভারি গাড়ি চলে। কয়েক মাস আগেও এখানে এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল দুর্ঘটনায়।”
মারিয়ার প্রতিবেশী বাবলু মণ্ডল, অমলবরণ দত্তেরা বলেন, “যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি তিন রাস্তার মোড় হলেও চওড়া নয়। ফলে, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েও কোনও ফল হচ্ছে না। আমাদের দাবি, রাস্তা চওড়া করা হোক।”
মৃত ছাত্রীর পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র্য। স্থানীয় মানুষের দাবি, ওই পরিবারটিকে কোনও ভাবে সরকারের তরফে সাহায্য করা হোক। দাবিগুলি সংশ্লিষ্ট মহলে জানানোর আশ্বাস দেয় পুলিশ। এরপরেই অবরোধ ওঠে। |