রাতের দিকে ঘুম ভেঙে যেত পদ্মার আওয়াজে। কখনও মনে হত পদ্মা ডাকছে। রাতে সেই ডাক ভয়ঙ্কর শোনাত। কিন্তু ভরসা ছিল পাথরের তৈরি স্পার।
|
নিজের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের
সামনে ময়নাবিবি। |
সেই ভেঙে পড়া স্পারের দিকেই সোমবার সকালে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন ময়ার ময়না বিবি। জলে ভেসে গিয়েছে বিছানাপত্র, চৌকি, বাসনপত্র। সংসার এ বার শুরু করতে হবে শূন্য থেকেই। তাঁর বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীর বাড়িও ভেঙে পড়েছে পদ্মায়। ময়না বিবি ৩ ছেলেমেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে ভাঙনের হাত থেকে কোনও রকমে প্রাণে বাঁচলেও, এ বার কোথায় যাবেন জানেন না। ভাঙন তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সংসার সীমান্তে।
ময়না বিবি বলেন, “এ বার খুব বৃষ্টি হয়েছে। তাই পদ্মায় জলও বেড়েছে। রাতে তার শব্দ শুনতে পেতাম। কিন্তু শনিবার রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময়ও পদ্মা প্রায় ৫০ হাত দূরে ছিল।” তাঁর কথায়, “ভাঙনের ভয় তো ছিলই। কিন্তু আমরা জানতাম পাথরের বাঁধানো স্পার রয়েছে। পাশেই বাঁশ ঝাড়ও রয়েছে। তাই ভাবতাম, এ বার বোধহয় বেঁচে যাব।” কিন্তু সেই আশা পূরণ হল না। তিনি বলেন, “রবিবার ভোর হতেই দেখি, আমাদের ঘরের দাওয়াতেই ধাক্কা দিচ্ছে জল। পড়িমড়ি করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। হাতের কাছে যা ছিল, কেবল সেটুকুই নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।”
একই অবস্থা হেনা খাতুনের। তিনি বলেন, “পদ্মার দিকে তাকালে ভয় করত। কিন্তু তবু ভরসা ছিল ওই পাথরের স্পার। শেষ পর্যন্ত তাই ভেঙে গেল।” তিনি বলেন, “ভোর রাতে গোঁ গোঁ শব্দে ঘুম ভেঙে যেতেই দেখি, স্পার নেই। ধসে পড়েছে নদীর পাড়। নারকেল গাছটা যেন আছড়ে পড়ল নদীর বুকে।”
পাকা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ছে। ভেঙে পড়ছে সংসার। গোলাম মুর্তুজার কণ্ঠ কান্নায় ভারি। তিনি কথাই বলতে পারছিলেন না। নিজের পাকা বাড়ি নিজের হাতেই ভেঙে ফেলছেন। আপাতত আশ্রয় নিতে হবে অন্য কোথাও। ওই বাড়ির ইট দিয়েই তৈরি হবে তাঁর নতুন আস্তানা। কিন্তু সে কবে হবে, কোথায় হবে, তা জানেন না। আপাতত আশ্রয় নিয়েছেন জামাইয়ের বাড়ি। |